অনলাইন নিউজ ডেক্স।।

আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বানের পথ বড়ই বন্ধুর। এ পথে বিপদ-আপদের কমতি নেই। আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ না থাকলে এ পথে টিকে থাকা মুশকিল। কারণ দাঈর কাজ হলো মানুষকে প্রবৃত্তির দাসত্ব, বর্ণবৈষম্য ও ঐতিহ্য-আভিজাত্য থেকে মুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আহ্বান জানানো।

তবে মানুষ ধন-ঐশ^র্য্যরে গৌরব, ক্ষমতার দম্ভ এবং পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকারের মায়া ত্যাগ করতে পারে না। তারা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীকে শত্রু ভেবে বসে এবং তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এমন পরিস্থিতিতে ইমানের পথে অবিচল থাকা এবং সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করা দাঈর জন্য আবশ্যক।

দাওয়াতের কাজে ধৈর্য ধারণ করা নবীদের সুন্নত। যুগে যুগে নবী-রাসুলরা অত্যন্ত ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে দাওয়াতের কাজ পরিচালনা করেছেন। তাদের ধ্যান-জ্ঞানই ছিল মানুষকে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে গড়ে তোলা। এ জন্য তারা কষ্ট-নির্যাতন বরদাশত করতেও পিছপা হননি। পবিত্র কোরআনে নবীদের ভাষায় বিবৃত হয়েছে, ‘তোমরা আমাদের যে কষ্ট দিয়েছো তাতে আমরা অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করব। আর ভরসাকারীদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ১২)

দাওয়াতের ময়দানে বিপদ-আপদ আবশ্যম্ভাবী। এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণই দাঈর শেষ সম্বল। লোকমান (আ.) স্বীয় পুত্রকে দাওয়াতে ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের নসিহত করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বৎস, তুমি নামাজ কায়েম করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও আর মন্দ কাজ হতে নিষেধ করো এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয়ই এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৭)

আল্লাহর পথের আহ্বানকে অধিকাংশ মানুষই এড়িয়ে যাবে দাঈর জন্য এটা কষ্টকর। নুহ (আ.) ৯৫০ বছর দাওয়াত দেওয়ার পরও অল্প কয়েকজন মানুষ ইমান এনেছিল। তখন তিনি আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে বলেছিলেন, ‘ওগো পালনকর্তা, আমি আমার জাতিকে রাত-দিন দাওয়াত দিয়েছি। তবে আমার দাওয়াত তাদের পলায়ন-প্রবণতাই বাড়িয়েছে। যখনই আমি তোমার ক্ষমার পথে তাদের আহ্বান করেছি, তখনই তারা কানে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়েছে, কাপড়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে, জিদ করেছে এবং চরম ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। ’ (সুরা নুহ, আয়াত : ৫-৭)

আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা নবীজিও দাওয়াতের ক্ষেত্রে শত বাধা-বিপত্তি ও অবজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছেন। সেই দৃশ্যের অবতারণা করে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং কোনো কথাই কর্ণপাত করে না। তারা বলে, তুমি যে বিষয়ে আমাদের দাওয়াত দাও সে বিষয়ের ব্যাপারে আমাদের অন্তর আবৃত, কান বধির এবং আমাদের ও তোমার মধ্যে আছে আড়াল। অতএব তুমি তোমার কাজ করো এবং আমরা আমাদের কাজ করি। (সুরা হা-মিম ৪১:৫)

এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে রাখা নিশ্চয়ই কঠিন। তাই আল্লাহ প্রিয়নবী (সা.)-কে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। আপনার ধৈর্য কেবল আল্লাহর জন্যই। তাদের কর্মকা-ে হতাশ হবেন না। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১২৭)

দাওয়াতের কাজে শত হুমকি-ধমকি আসবে। জেল-জুলুম-দেশান্তরের ভয় দেখানো হবে। জানমালের নিরাপত্তা সংশয়ের মুখে পড়বে। তবে প্রকৃত দাঈ হতাশ হবে না; সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবশ্য তোমাদের জানমালের পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরিকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি তোমরা শুনবে। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার। ’ (সুরা ইমরান ৩ : ১৮৬)

মুসা (আ.) এর দাওয়াত ও মোজেজায় আকৃষ্ট হয়ে জাদুকররা যখন ইমান আনেন, তখন ফেরাউন তাদের কঠিন হুমকি দেয়। তবে তারা মাথা নত করেননি। বরং আল্লাহর কাছে ধৈর্যশক্তি প্রার্থনা করেন। ঘটনাটির অবতারণা করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ফেরাউন বলল, তোমরা কি আমার অনুমতি দেওয়ার আগেই ইমান আনলে? এটা প্রতারণা যা তোমরা এ নগরীতে প্রদর্শন করলে। যাতে করে এ শহরের অধিবাসীদের শহর থেকে বের করে দিতে পারো। তোমরা শিগগিরই বুঝতে পারবে। আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেব। তারপর সবাইকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারব। তারা বলল, আমাদের তো মৃত্যুর পর পরওয়ারদিগারের কাছে ফিরে যেতেই হবে। আমাদের সঙ্গে তোমার শত্রুতার কারণ হলো, আমরা আমাদের পরওয়ারদিগারের নিদর্শনসমূহের প্রতি ইমান এনেছি যখন তা আমাদের কাছে পৌঁছেছে। হে আমাদের পরওয়ারদিগার, আমাদের জন্য ধৈর্যের দ্বার খুলে দিন এবং আমাদের মুসলমান হিসেবে মৃত্যু দান করুন। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত ১২৩-১২৬)

দাওয়াতের পথে ধৈর্যের সঙ্গে অবিচল থাকলে আল্লাহর সাহায্য একদিন আসবেই। তবে এ পথে অনেক কষ্ট সইতে হবে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত পাওয়া মোটেও সহজ নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি মনে করো যে, তোমাদের পূর্বের লোকদের অবস্থা পাড়ি না দিয়ে তোমরা জান্নাতে চলে যাবে? তাদের অভাবে তাড়না ও বিপদ স্পর্শ করেছিল। তারা এতই হাঁপিয়ে উঠেছিল যে, রাসুল ও মুমিনরা চিৎকার করে বলেছিলেন, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে! শোনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য একান্তই কাছে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৪)

আল্লাহর সাহায্য শেষ মুহূর্তেই আসে। সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করাই দাঈর কাজ। যুগে যুগে আল্লাহর পথের আহ্বানে সাড়া দানকারীদের আল্লাহ রক্ষা করেছেন এবং অবজ্ঞাকারীদের ধ্বংস করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এমন কি যখন রাসুলরা হতাশ হয়ে পড়তেন এবং এরূপ ধারণা করতে শুরু করতেন যে, তাদের অনুমান (সাহায্যের বিষয়ে) মিথ্যায় পর্যবসিত হচ্ছে, তখনই তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছাত। অতঃপর আমি যাদের চেয়েছি তারা মুক্তি পেয়েছে। অপরাধীদের প্রতি আমার শাস্তি কখনো প্রতিহত করা যায় না। (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১১০)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *