█▒▒▒ রুবেল মজুমদার ▒▒▒█

প্রকৃতির এক অপার লীলাভূমি নেমে কুমিল্লা জেলাজুড়ে। চারপাশে শুধু হলুদের সমারোহ। সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের চোখে মুখে আনন্দের রেখা ফুটে উঠেছে। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলা ষোল উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠগুলো।সুবাস ছড়া”েছ পুরো জেলাজুড়ে। আমনের বাম্পার ফলন শেষে একই জমিতে সরিষার বাম্পার ফলনে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে কুমিল্লার সরিষা চাষীদের মুখে, কম খরচে লাভজনক হাওয়া সরিষা চাষের দিকেই ঝুঁকছেন এই জেলার অনেক কৃষক। আঞ্চলিক কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলায় এবার সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০,০০০ হেক্টর জমিতে।সব কিছু ছাড়িযে ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে ।

ধান পাট ও মৌসুমী সবজি কুমিল্লা জেলার অর্থকরী ফসল হলেও দিন দিন সরিষার চাহিদা বাড়ছে। জেলা কৃষি অফিস ও বিভিন্ন এনজিও সং¯’া আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষা আবাদের কৃষকের সংখ্যা। সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলি চাষাবাদের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এ বছর প্রায় ৯ হাজার কৃষককে অর্থ প্রনোদনা ও সার বিতারণ করা হয়। কুমিল্লার মুরাদনগর, আদর্শ সদর, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, ব্রাহ্মনপাড়া, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাস, চান্দিনা, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় এবছর সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এবারের মৌসুমেও এসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ আলোয় জ্বলে উঠেছে।

কুমিল্লা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে এবারে কুমিল্লা জেলায় ১১হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমের মতো এবারেও মুরাদনগর উপজেলায় ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষা ফলনে শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া হোমনা ১,০০০,নাঙ্গলকোট ৭,০০,মেঘনা ৭০০০,তিতাস ৪,০০, দেবিদ্বার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়।
সরেজমিনে জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়,বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে দুলছে সরিষা আর সরিষা। কৃষকরা পরম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সরিষার মাঠে। মাঘের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষেত থেকে সরিষা সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। তারপর এসব সরিষা যাবে তেল তৈরির মিল-কারখানায়। মুরাদনগর ও চান্দিনা উপজেলার কৃষকরা জানান,কম পুঁজিতে সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভ হয়।
কৃষবিদ সুবীর কুমার সরকার জানান,বিগত বছর থেকে এবার কুমিল্লা সরিষ বাম্পার ফলন হয়েছে ,সরিষা আবাদের বিষয়ে চাষীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলতে পারলে তারা সেরা সরিষা বান্ধব চাষী হয়ে উঠবে। আর এখানকার সরিষা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।নিয়মিত কৃষকদের আমরা কর্মশালা মাধ্যমে আমরা জেলা জুড়ে সরিষা চাষের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছি।
মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামের সরিষা চাষি জাকির হোসেন জানান, এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘাপ্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। একই গ্রামের কৃষক মনির হোসেন জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছি। ফলন ভালো ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকেই ঝুঁকে পড়বে। সরিষার জমিতে ধানের আবাদও ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, সরিষা লাভজনক পণ্য হাওয়া ধীরে ধীরে কুমিল্লা কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে ,করোনকালী আমরা অন্যন্য ফসলির মতো সরিষা আবাদে সরকারি অর্থ ও সার বীজ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছি। এছাড়া এবছর সরিষা মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হাওয়া এ জেলা দেরিতে অনেক ¯’ান সরিষা চাষাবাদ করা হয়। আমরা সব সময় কৃষকদের চাষাবাদের ব্যাপারে সবধরণের সহযোগিতা পরামর্শ দিয়ে আসছি। সরিষা আবাদে কৃষকদের সাথে উঠান বৈঠক উপজেলা ভিত্তিক কৃষিবিদের মাধ্যমে কর্মশালা করেছি। সরিষা চাষ করে কুষকরা শুধু তেলই তৈরি করে না। সরিষা ভাঙ্গিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভূষি তৈরী হয় যা ভালো গো-খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *