█▒▒▒ ম্যাক নিউজ ▒▒▒█

নেকবর হোসেনঃ   কুমিল্লা

প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র আশা নূর। একমাত্র শিশু ছেলেকে কোলে রেখে ছেড়ে গেছেন স্বামী। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই কোথাও। ঘরে বৃদ্ধা মা। নেই কোন ভিটেমাটি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতিবন্ধী আশা নূর মাকে নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন। নেই কোন আশ্রয়ের ঠাঁই। তার এই কষ্ঠের দিনগুলো কখনও সমাজের ধনাঢ্যদের চোখে পড়েনি। বৃদ্ধা মা ও শিশু সন্তানকে নিয়ে অতুল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল প্রতিবন্ধী আশা নূর। ঠিত তখনই উপজেলা থেকে জানতে পারে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছেন। আশা নূর কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বৃদ্ধা মা ও সন্তানকে নিয়ে থাকতে ভূমিহীনদের পূনর্বাসনে নির্মিত একটি ঘর পাবেন। প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাসে আশা নূর মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে স্বপ্ন দেখছেন শিশু ছেলে ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বেঁচে থাকার। তার মতো কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৯৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্বাসে মাথা গোঁজে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।

কুমিল্লার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী “মুজিববর্ষ” উপলক্ষে জাতির জনকের স্বপ্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিতে ভূমি ও গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনের জন্য কর্মসূচী নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কুমিল্লা জেলার ১৭ উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের তালিকা করা হয়েছে। তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ত্রাণমন্ত্রণালয়, এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে সম্পৃক্ত করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেই লক্ষে কুমিল্লা জেলার ১৭ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার ভূমিহীনকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৯৩টি পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ৫৯৫টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পনর্বাসনের জন্য কাজ অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপর হিসেবে প্রথম পর্যায়ে প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যাক্তা, ভিক্ষুক ও ষাটোর্ধ প্রবীন ভূমি ও গৃহহীন নাগরিকরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।  সেই অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী “মুজিববর্ষ” উপলক্ষে জাতির জনকের স্বপ্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিতে ভূমি ও গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ১৯৩ ঘরের কাজ ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। তারমধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, দাউদকান্দি, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, মেঘনা, হোমনা ও তিতাসে ভূমিহীনদের পূনর্বাসনের জন্য এই ঘর নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়। জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রকল্পের ১৯৩টি ঘর ভূমিহীনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পাচ্ছেন শুনে মাথা গোঁজার স্বপ্ন দেখছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামের হতদরিদ্র ভূমিহীন মো. ইব্রাহীম। ৩৫ বছর বয়সে আক্রান্ত নানা রোগে। পরিবারসহ ছোট ছোট সন্তানদের সাথে বাড়িতে আছে বৃদ্ধা মা। ভূমিহীন ইব্রাহীম জানান, বাড়িতে ভাইসহ তার তিন শতক সম্পত্তি ছিল। বছর দুয়েক আগে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। তার চিকিৎসায় প্রায় ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ছোট ভাই অন্যের কাছ থেকে ধার করে ওই চিকিৎসার টাকা বহন করেন। সুস্থ হয়ে উঠার পর স্থানীরা বসে তার একমাত্র বসতভিটা বিক্রি করে ধারকৃত টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েন। বাড়িতে মাথা গোঁজার মত ভালো ঘর নেই।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্বাসের কথা শুনে অত্যন্ত খুশি ভূমিহীন ইব্রাহীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে থেকে ওনার জন্য দোয়া করবেন।

‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনে কুমিল্লা লাকসামের গুচ্ছগ্রামে ঘর নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

লাকসাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দেবেশ চন্দ্র দাস বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কোন প্রকার অনিয়ম হয়নি। সরকারের বরাদ্দকৃত বাজেট জনগনের উপকারে ব্যয় করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আমি নিজে প্রকল্পের সকল কাজ পরিদর্শন করি। কোথাও যেন কোন ধরনের অনিয়ম না হয় এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষনিক তদারকি করেছি।

কুমিল্লার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ভূমি ও গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে কুমিল্লা জেলায় প্রায় ৫ হাজার ভূমিহীনকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৯৩টি পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ৫৯৫টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আশাকরি সকলের সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা জেলার প্রত্যকটি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করতে পারবো। আমরা যে উন্নত বাংলাদেশে স্বপ্ন দেখছি, সেই স্বপ্ন যদি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয় সেই ক্ষেত্রে আমাদের যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আছে তাদেরকে পূর্বাসনের কোন বিকল্প নেই। পিছিয়ে পড়া মানুষকে যাতে আমরা মূল ¯্রােতধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে পারি সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। শুধু এই নয় তাদেরকে আরও কিভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা যায় এবং স্বাবলম্বী করে আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও সচ্ছল করতে পারি, সেই লক্ষ্যেও আমরা কাজ করছি। মূল স্রোতধারার সাথে পিছিয়ে পড়া মানুষকে সম্পৃক্ত করে দেশে অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *