[ ম্যাক রানা ]
মহাসড়কে ভূয়া সাংবাদিক পরিচয়ধারী দস্যূচক্রের ০৩ সদস্যকে আটক করেছে কুমিল্লা জেলা পুলিশকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি-ইলিয়টগঞ্জ এলাকা থেকে দস্যূতার ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যে দস্যূতার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রিমিও জি সুপেরিয়র প্রাইভেটকার, দস্যূতার সরঞ্জাম, লুন্ঠিত টাকা ও ডাকাতির সাথে জড়িত ৩ সদস্যকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে বুধবার আটক করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে এনিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিএিম (বার)। এসময় কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো: আজিম উল-আহসাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সজীব খান সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, কুমিল্লা হাইওয়েতে ড্্রাইভারের ছদ্মবেশে নিরীহ যাত্রীদের পরিবহনের নামে ডাকাতির মাধ্যমে সর্বশান্ত করে মেতে উঠেছে এ পেশাদার অপরাধী চক্রটি। গত ২৪ জানুয়ারী কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের ব্যবস্থাপক (সমন্বয়) ও ইনচার্জ মো: মোর্শেদ আজম বাকী বিল্লাহকে দুষ্কৃতিকারীরা যাত্রীবেশে একটি প্রিমিও প্রাইভেটকারে যার রেজি নং-ঢাকা মেট্্েরা-গ-৩২-৩২৮৮ তে উঠিয়ে পরবর্তীতে জিম্মি করে গাড়ীর ভিতরে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে ভিকটিমকে দাউদকান্দি মডেল থানাধীন মহাসড়কের সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্র্জি লি: এর সামনে রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়। এনিয়ে ঔই দিনই দাউদকান্দি মডেল থানায় ৩৯৪ পেনাল কোড মামলা রুজু করা হয়। মামলাটি সম্পূর্ণ ক্লুসেক হওয়ায় পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এর নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন, জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মো: সাজ্জাদ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যে সম্পৃক্ত আসামী মো: আফজল হোসেন (৩৮), মো: রনি (৩৫) ও মো: জহির হোসেন (৩৯) কে ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকার সহ গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৪ জানুয়ারী সকাল ১০টায় ঢাকা আগারগাঁও শিশু মেলার সামনে উক্ত আসামীরা ও পলাতক আসামী দিপু সহ একত্রিত হয়ে একটি প্রিমিও প্রাইভেটকার যার রেজি নং-ঢাকা মেট্্েরা-গ-৩২-৩২৮৮ যোগে দস্যূতা করার লক্ষ্যে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে বিকেল আনুমানিক ৪টায় তারা পদুয়ার বাজার ফ্লাইওভারের নীচে আসে এবং হোটেল নুরজাহানের সামনে দিয়ে গাড়িটি ইউটার্ণ করে করে ঢাকা মূখী করে গাড়ীতে যাত্রী উঠানোর জন্য লোকজন ডাকতে থাকে। বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫টার সময় ফøাইওভারের পশ্চিম প্রান্তে মামলার ভিকটিম মো: মোর্শেদ আজম বাকী বিল্লাহ ঢাকা যাওয়া উদ্দেশ্যে তাদের গাড়িতে ড্্রাইভার আসামী রনির সাথে ২০০/=টাকা ভাড়া চুক্তি করে গাড়িতে উঠে। গাড়ির সামেনর সিটে আসামী আফজল ও পিছনের সিটের মাঝখানে আসামী জহির ও ডান পাশে পলাতক আসামী দিপু যাত্রীবেশে অবস্থান করে। গাড়িটি ঢাকামূখী কিছুদূর যাওয়ার পর আসামী জহির সামনে নেমে যাবে বলে ভিকটিমকে আসামী জহির ও দিপু মাঝখানে বসায়। গাড়িটি দাউদকান্দি মডেল থানাধীন ইলিয়টগঞ্জ বাজার হতে ২০০ গজ সামনে গেলে আসামীরা তাদের নিজেদেরকে ছিনতাইকারী পরিচয় দিয়ে গাড়িতে থাকা রেঞ্জ, প্লায়ার্স, স্ক্রু ডাইভার ও কাঠের লাঠি দিয়ে এলাপাথারী ভিকটিমকে মারধর করে শারীরিক নির্যাতন ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা আনার জন্য ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। একপর্যায়ে প্রাণরক্ষার্থে ভিকটিম ৫০ হাজার টাকা করে দুই বারের ১ লক্ষ টাকা এনে বিকাশ থেকে গৌরিপুর বাজার একটি দোকান থেকে ক্যাশ আউট করে রাত ৮টায় সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লি: এর সামনে রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়ির সামনের ড্যাসবোর্ডে “মানব জগৎ নিউজ ” নামক পত্রিকার নামফলক লাগায় এবং আসামী আফজল তার গলায় উক্ত পত্রিকার নিজ নামীয় ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ঝুলিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
অভিযানে থাকা কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আটককৃত আসামীরা এভাবে প্রতি রবিবার, সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকার অদুরে নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলায় এভাবে করে অভিনব কায়দায় সাধারণ যাত্রীদের গাড়িতে উঠিয়ে নির্যাতন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। প্রতি শুক্র ও শনিবার রাস্তায় বন্ধের দিনে লোকজন কম থাকায় তারা এ কাজটি থেকে সপ্তাহে ২/৪ দিন বিরতি নেয় এবং প্রতি মঙ্গলবার তারা একত্রিত হয়ে ঢাকা ফার্মগেট এাকায় মদ্যপান ও আড্ডায় থাকে বলে তথ্য দেন তিনি। গ্রেফতারকৃত আসামী মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার বর্তমান ঢাকা মিরপুরের শেওড়াপাড়া কিনাই মোল্লার ছেলে মো: আফজাল হোসেন, চাঁদপুর জেলার দয়ালতি গ্রামের মো: লিটন মিয়ার ছেলে মো: রনি ও চাঁদপুর জেলার সদরের কল্যানদী গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে মো: জহির হোসেন। অন্য পলাতক আসামী দিপুকে আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেন জানায় জেলা পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *