[ম্যাক নিউজ]

ঢাকা মঙ্গলবার ২ মার্চ ২০২১: সাংবাদিক সুরক্ষার জন্য কোন আইন না থাকার ফলে দেশে সাংবাদিক নিধন চলছে। সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে, কুপিয়ে হত্যা করছে, প্রকাশ্যে রাস্তায় পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলছে, গাছে বেঁধে নির্যাতন করছে। অথচ মামলা হওয়ার পরও পুলিশ আসামী খুঁজে পান না। সাগর-রুনির কথা হয়তো নাইবা বললাম। তাহলে কি ধরে নিতে হবে এদেশে সাংবাদিক নির্যাতন-হত্যার বিচার নেই? কোম্পানীগঞ্জে মুজাক্কির হত্যার আলামত সিসি ফুটেজ নাকি গায়েব হয়ে গেছে! এগুলো কি প্রশাসনের উদাসীনতা নয়? পুলিশ-সাংবাদিকের সাথে সৌহাদ্য গায়েব হয়ে গেছে। এই সম্পর্ক পূনরায় জোড়া লাগানো দরকার। রাষ্ট্রের স্বার্থে পুলিশ-সাংবাদিককে আবারো একযোগে কাজ করার প্রবণতা সৃষ্টি করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম নেতৃবৃন্দ।

সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বাইরে রেখে আইনটি সংশোধনও জরুরী বলে মতপ্রকাশ করেন নেতৃবৃন্দ। ২ মার্চ দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ঢাকা জেলার আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কলম বিরতিকালে নেতৃবৃন্দ একথা বলেন।

বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএমএসএফ সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর, সহ-সভাপতি ড. সাজ্জাদ চিশতী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, যুগ্ম-সম্পাদক ইকবাল হোসেন রুবেল, সহ-সম্পাদক খায়ের হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবুল হাসান বেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুবকর তালুকদার, কবির নেওয়াজ ও মোনালিসা মৌ, শিক্ষা সম্পাদক গাউছ উর রহমান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব মাসুম বিল্লাহ, নিহত মুজাক্কিরের বন্ধু এ আর খান, খালাতো ভাই নজরুল ইসলাম ফয়সাল, খোরশেদ আলম ও আল আমিন তাওহীদ প্রমূখ।

জার্নালিস্ট শেল্টার হোমের আহবায়ক মিজানুর রশীদ মিজানের সঞ্চালনায় একাত্মতা ঘোষণা করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সোলায়মান মিয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ, তেজগাঁও কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরানুল আজিম চৌধুরী, তিতুমির কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শাহাদাতসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেন।

প্রায় দেড় শতাধিক সাংবাদিক সংগঠন ছাড়াও দেশের তিন শতাধিক প্রিন্ট, অনলাইন পত্রিকা ও আইপি টিভি সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সংবাদ আপলোড বন্ধ রেখে কলম বিরতির সাথে একাত্মতা পালন করেন।

এদিকে একই সাথে সারাদেশের জেলা উপজেলায় বিএমএসএফ’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কলম বিরতি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক সমাজ দায়ী ব্যক্তির গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোড় দাবি জানিয়ে সরকারের নিকট সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নের দাবি করেন। তা না হলে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ব্যানারে বৃহত্তর কর্মসূচীর ডাক দেয়ারও হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলর চাপরাশিরহাট স্থানীয় আওয়ামীলীগের দ’ুগ্রুপের সংঘর্ষকালে অস্ত্র ব্যবহারের ভিডিওধারণ করছিল মুজাক্কির। ক্ষিপ্ত হয়ে একটি পক্ষের সন্ত্রাসীরা তাকে ধরে নিয়ে ভিডিও ডিলেট করতে চাপ প্রয়োগ করে। ভিডিও ডিলেটে অসম্মতি জানালে তাকে গুলি করা হয়। তিনদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। সম্প্রতি সংবাদের জেরধরে গাজীপুরে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিককে পিটিয়ে তিনটি হাতপা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে কামাল হোসেনকে বালু-পাথরখেকো সন্ত্রাসিরা গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনকে মধ্যযুগীয় বর্বরতাও হার মেনে যায়। বিএমএসএফ পটুয়াখালী সভাপতি হারুন-অর রশীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাসহ দেশব্যাপী সাংবাদিক হয়রাণী, নির্যাতন, ছাটাই ও মামলায় গোটা সাংবাদিক সমাজ অতিষ্ট।
আজ সারাদেশের তিন শতাধিক পত্রিকা, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনসমুহ বিএমএসএফ ঘোষিত কলম বিরতি স্বতস্ফুতভাবে পালন করে সরকারের নিকট সাংবাদিক সুরক্ষায় আইন প্রণয়নসহ ১৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান।
বিএমএসএফের পক্ষ থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *