[ ম্যাক নিউজ ]

রিপোর্টঃনেকবর হোসেন।


কুমিল্লা নগরীর প্রায় প্রতিটি খাল ও ড্রেন এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এসব খাল ও ড্রেনে তৈরি হয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। কোথাও কোথাও বেশি পরিমাণে ময়লা জমে খাল ও ড্রেনের পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে শুধু খাল আর ড্রেন নয়, ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও দিঘির মধ্যেও।

এদিকে, এভাবে খাল, ড্রেন, পুকুর ও দিঘিতে অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। ময়লা জমে সৃষ্ট দুর্গন্ধে এসব স্থানের আশপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি বাড়ছে মশার উপদ্রবও। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে এসব খাল ও ড্রেন কুমিল্লা নগরীর জন্য যেন ‘বিষফোড়া’ হয়ে ওঠে। তখন ময়লা-আবর্জনার কারণে সহজে পানি সরতে পারে না। যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীতে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।

পরিবেশবিদরা বলছেন, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশন নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারেনি, যে কারণে অসচেতন নাগরিকরা পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছেন। এ ছাড়া নগরীতে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকার কারণেও এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, তারা এই বিষয়ে বিভিন্ন কাজ করলেও নগরবাসী খাল-ড্রেনসহ জলাশয়ে ময়লা ফেলা বন্ধে সচেতন হচ্ছেন না।

সরেজমিন ঘুরে নগরীর সদর হাসপাতাল, উত্তর চর্থা, সালাউদ্দিন, টমছম ব্রিজ, শিক্ষা বোর্ড,দক্ষিণ চর্থা,মহিলা কলেজ সমনে, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি খাল ও ড্রেনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সালাউদ্দিন এলাকার খালটিতে ময়লার স্তূপের কারণে নিচের পানিও দেখা যাচ্ছে না। টমছম ব্রিজ এলাকার কান্দি খালটির অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে গেলে মনে হবে, খালটি যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যদিও এই খালটি দিয়েই নগরীর বেশিরভাগ পানি অপসারণ হয়। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের প্রায় সবখানেই একই অবস্থা।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এলাকার বাসিন্দা সাইফুল রহমান বলেন, নগরীতে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নেই। আবার অনেক স্থানে ময়লা সংগ্রহ করার লোকজনও যায় না। যে কারণে মানুষ ময়লা-আবর্জনা খালে, ড্রেনে, পুকুরে ও দিঘিতে ফেলছে। আর সিটি করপোরেশন থেকে এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষ এই বিষয়ে সচেতন হচ্ছে না।

টমছম ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা নাসির মিয়া বলেন, বাসাবাড়ির পাশাপাশি নগরীর অনেক হোটেল ও দোকান তাদের ময়লা-আবর্জনা খালে ও ড্রেনে ফেলে দেয়। বিভিন্ন বাজারের ময়লাও ফেলা হয় এসব স্থানে। যার কারণে নগরীর প্রতিটি খাল ও ড্রেন এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি এসবের কারণে বেড়েছে মশার উপদ্রব। খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম গোমতী টাইমসকে বলেন, মানুষের অসচেতনতার কারণে এই সমস্যা তীব্রতর হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, বছরের পর বছর ধরে মানুষ এভাবে পরিবেশ দূষণ করলেও তাদের সচেতন করতে তেমন কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। নাগরিকদের সচেতন করতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সিটি করপোরেশনের অনেক আগেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ থাকলে বিষয়টি এই পর্যায়ে যেত না। আমরাও চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করতে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমরা মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন কাজ করেছি, মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও মানুষ খাল-ড্রেনে ময়লা ফেলছে। তবে আমরা নগরীর প্রতিটি খাল ও ড্রেনকে পরিস্কার করে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে আগামী বর্ষায় কোনো সমস্যা না হয়। আগামী জুন পর্যন্ত আমাদের এই কাজ চলবে। পাশাপাশি আমরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন স্থাপনের চেষ্টা করছি। মশা নিধনে এসব ড্রেন-খালে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *