ম্যাক নিউজ ডেক্স

জন্ডিস কোনো রোগ নয়। জন্ডিস মানে যকৃতের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস। এটি রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ মাত্র। জন্ডিস হলে রোগীর পথ্য কী হবে, তা নিয়ে অনেকের ভেতর অনেক ভ্রান্তি রয়েছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। অনেক সময় দেখা যায়- লহিত কণিকার ভাঙ্গনজনিত জন্ডিস (সাধারন সমস্যার) ক্ষেত্রে একটি নিদিষ্ট মেয়াদের মধ্যে এই রোগ এমনিতেই সেরে যায়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান বলেন, ‘জন্ডিস’ যদিও ইংরেজি শব্দ। তবুও এটা বর্তমান বাংলা শব্দের সাথে সংযুক্ত হয়ে গেছে। জন্ডিস বলতে আমরা বুঝি, লিভারের যেকোনো জটিলতার কারণে চোখ হলুদ হওয়া, প্রস্রাব হলুদ হওয়া, খাওয়ায় অরুচি, মুখগহ্বর হলুদ হওয়া এবং কারো কারোর ক্ষেত্রে চামড়া প্রযন্ত হলুদ হয়ে যাওয়া। এটাকে আমরা জন্ডিসের লক্ষণ হিসেবেও বলে থাকি। তবে জন্ডিস হওয়া মানে আমরা ধরে নেই লিভার কোনা কোনাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা আক্রান্ত।

সাধারনত কোন কোন কারণে জন্ডিস হতে পারে?

এ প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান বলেন, জন্ডিসের কারণ গুলিকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একটা ভাইরাসজনিত কারণ, আর একটা ভাইরাসের বাহিরে। ভাইরাসজনিত কারণগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে এ, বি, সি, ডি, ই এভাবে নাম করণ করা হয়েছে। আর ভাইরাসের বাহিরের কারণগুলো হতে পারে ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিত্তনালীতে পাথরজনিত কারণে হতে পারে অথবা টিউমার বা ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের নিচে যারা তাদেরকে আমরা ভাইরাসজনিত জন্ডিস বলি। আর ৪০ এর বেশি হলে আমরা তাকে ভাইরাসের বাহিরের কারণকে সন্দেহ করি।

প্রাথমিক কী কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায়?

এ বিষয়ে ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান বলেন, সাধারণত শরীরে কোনোভাবে যদি জীবাণু যায় সেটায় ভাইরাসজনিত। আমাদের দেশে সাধারণত হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই এই দুটি ভাইরাস খাবার এবং পানির মাধ্যমে ছড়ায়। আর হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি রক্ত বা শুয়ের মাধ্যমে ছড়ায়।

তিনি বলেন, প্রথমে যে লক্ষণ দেখায়, খাবারে অরুচি, অতিরিক্ত দূর্বলতা এরপরে তার চোখ এবং প্রস্রাব হলুদ হওয়া। একই সাথে কারো কারো ক্ষেত্রে বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে। এছাড়াও কারো কারোর ক্ষেত্রে মলত্যাগে কিছু পার্থক্য দেখাদেয়। এগুলো মূলত ভাইরাসজনিত জন্ডিসের লক্ষণ।

আর ভাইরাসের বাহিরে জন্ডিসের লক্ষণগুলো হল- শরীর চুলকানি, জ্বর, আবার কারো কারোর ক্ষেত্রে লিভারে সমস্যা থাকলে সেটা আরও খারাপের দিকে যেতে পার।

জন্ডিস বুঝতে কী কী পরীক্ষা করা হয়?

ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান বলেন, প্রথমে আমরা রোগীর লক্ষণগুলো দেখে কিছু পরীক্ষা দিয়ে থাকি। যেমন: রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কত, SGPT বা AltPep, এবং সাথে একটা আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা দিয়ে থাকি। এছাড়াও বয়স বিবেচনা করে ভাইরাসের পরীক্ষা দিয়ে থাকি।

বুকে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়ার সাথে জন্ডিসের কোন সম্পর্ক আছে কি না?

ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান বলেন, এর সাথে জন্ডিসের তেমন কোনো সম্পর্ক নাই। এটা অনেকগুলি কারণে হতে পারে প্রথমত, যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, খাবারের মানের কারণে হতে পারে (অতিরিক্ত তেল, চর্বি, ঝাল যুক্ত খাবার) বা খাবারের পরেই যদি পেটে চাপ পড়ে। এটার জন্য করণীয় হল খাবারের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।

যেমন: পরিমাণে কম খাওয়া এবং খাওয়ার সময় ঢুকে ঢুকে পানি না খাওয়া। খেয়েই শুয়ে না পড়া।

জন্ডিসের চিকিৎসা কী?

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান বলেন, জন্ডিস নিরাময়ে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। এখানে বিশ্রামটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তার লিভার আক্রান্ত। আর বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক পুষ্টিকর তরল খাবার খাবে। এটাই হল জন্ডিসের মূল চিকিৎসা। কারণ আমরা বলছি, সাধারণত জন্ডিস নিজে নিজে ভালো হবে সময়ের পরে। এর সাথে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ঔষধ নেওয়া যেতে পারে।

ওডি/জেআই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *