[ ম্যাক নিউজ রিপোর্টঃ-মোঃ বিল্লাল হোসেন, দেবীদ্বার প্রতিনিধি]

কুমিল্লার দেবীদ্বারের ছোট মিয়া(৬২) একটি শিশু ধর্ষণ মামলায় পলাতক (নিখোঁজ) হওয়ার প্রায় দেড় মাস পর তিতাস উপজেলার নির্জন এলাকা থেকে তার কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত শনিবার দুপুরে তিতাস উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের দড়ি মাছিমপুর গ্রাম সংলগ্ন সরিষাবাগ থেকে ছোট মিয়ার ওই কঙ্কালটি উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, তিতাস উপজেলার গাছগাছালি ও ঝোপঝারে ভরপুর দড়ি মাছিমপুর গ্রাাম সংলগ্ন সরিষাবাগে তেমন লোকজন আসা-যাওয়া না থাকলেও, গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক ফসলী জমিতে কাজ করতে যাওয়ার পথে সরিষাবাগের জমির এক পাশে ওই কঙ্কালটি দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দেন।

বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সৈয়দ আহসানুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস, সেকেন্ড অফিসার মধুসুদন সরকার, কলাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে ছোট মিয়া’র মাথার খুলি, বুকের হাড়, হাত ও পায়ের হাড্ডিগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। উদ্ধারকৃত কঙ্কালের সাথে একটি পাঞ্জাবী, পাঞ্জাবীর পকেটে টুপি, মাস্ক, শাস্বকস্ট জনিত রোগ নিরাময়ে ইনহেলার সহ কিছু ওষুধ ও একটি বন্ধ মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।

সংবাদ পেয়ে উক্ত মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ ও মৃত ব্যক্তির পরিচয় উদঘাটনে তিতাস থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আসেন সিআইডি ও পিবিআই’র দু’টি দল। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির পরিচয় উদঘাটন করা হয়।

তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সৈয়দ আহসানুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার আত্মীয়-স্বজনকে থানায় ডেকে এনেছি, তারা ওই মোবাইল সেট ও সেটে থাকা নম্বরগুলো সনাক্ত করেছেন। পরিবারের সদস্যদের থেকে ডিএন এর আলামত সংগ্রহ ও ছোরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে লাশের আলামত সহ ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।

তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস বলেন, দেবীদ্বার থানার একটি ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরই তিনি নিঁখোজ ছিলেন, শনিবার স্থানীয় কৃষকরা ধান খেতের পাশে একটি কঙ্কাল দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়। বিষয়টি তদন্তাধীন। উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের ব্যাক্তিটি কেন, কি কারণে, কার সাথে এখানে এসেছে বা কেউ নিয়ে এসেছে কিনা ? তা ছাড়া এ ঘটনাটি ষ্ট্রোক জনিত, স্বাভাবিক মৃত্যু কি না ? হত্যা না আত্মহত্যা এ বিষয়টি ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসা এবং তদন্তের পূর্বে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবেনা।

দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কোন কঙ্কাল উদ্ধার হয়নি, তিতাস থানা পুলিশ দেবীদ্বার ভিংলাবাড়ির ছোট মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করেছে। স্বজনেরা লাশ এনে কবরস্থও করে ফেলেছে।

উল্লেখ্য গত ৫ মার্চ বিকেল সাড়ে ৩টায় দেবীদ্বার পৌরএলাকার ভিংলাবাড়ি (আলীয়াবাদ) গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকানে ৯ বছরের এক ছোট্ট শিশু কন্যাকে ষাটোর্ধ বয়সী দাদা সম্পর্কীয় ছোট মিয়া(৬২) নামে এক লম্পট কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়। ওই অভিযোগে ভিক্টিমের মা’(৩৫) ছোট মিয়া(৬২)কে একমাত্র আসামী করে দেবীদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় বাদী তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, গত ৬ মার্চ রাতেরবেলা আমার মেয়ে হঠাৎ শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে আমি গ্রাম্য ডাক্তার দেখাই। ডাক্তার দেখানোর পর আমার মেয়ে কিছুটা সুস্থ হলে সে আমাদেরকে জানায় য়ে, গত ৫ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকাল অনুমান সাড়ে ৩টায় ছোট মিয়া আমার মেয়েকে কৌশলে তার দোকান ঘরে নিয়া ঘরের দরজা বন্ধ করে আমার মেয়ের পরিহিত সেলোয়ার খুলে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে।

ছোট মিয়া(৬২) দেবীদ্বার পৌর এলাকার ভিংলাবাড়ি(আলিয়াবাদ) গ্রামের মৃত: আহাম্মদ আলীর পুত্র। গত ৭ মার্চ তাকে একমাত্র আসামী করে দেবীদ্বার থানায় মামলা দায়ের’র পর ঘটনা জানাজানির হওয়ার পর গত ৮ মার্চ থেকে ছোট মিয়া নিখোঁজ হলে তাকে পুলিশ ও তার পরিবারের লোকজন আর খোঁজে পাননি।


দেবীদ্বার প্রতিনিধি:-
০১৮৪০০০১৬৬৬
২৫/০৪/২০২১ইং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *