[ ম্যাক নিউজ ডেস্ক ]

সম্প্রতি চালু হওয়া ১০৬ নম্বরে (টোল ফ্রি কল) ফোন করে দুর্নীতি, অনিয়মের যেকোনো তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনে জানাতে পারবেন। অথবা এসব বিষয়ে ডাকযোগে দুদকের ঠিকানায় পাঠাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে।

দুদকে কোন ধরনের অভিযোগ নেওয়া হয় আর কীভাবে অভিযোগ করতে হয়- তা জানা না থাকার কারণে অনেকে ঠিকমতো অভিযোগ দিতে পারেন না। প্রয়োজনীয় তথ্যও দেন না অনেকে। তাই বাছাই পর্যায়ে বাতিল হয়ে যায় এসব অভিযোগ। অভিযোগ যাচাই-বাছাইকালে সেসব বিষয় আমলে নেওয়া হয় তা নিচে উল্লেখ করা হল।

অভিযোগ বাছাইয়ের মানদণ্ড

নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে অভিযোগ বাছাই করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত কি না। যিনি অভিযোগ করেছেন, তার পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কি না। সেটা যাচাইয়ের পাশাপাশি অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ কি না- তাও দেখা হয়। শত্রুতা অযথা হয়রানির উদ্দেশে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে কি না- সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়। পরে দেখা হয়, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তার দপ্তর, দাপ্তরিক মর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল- অভিযোগটি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ ও দুর্নীতি দমন বিধিমালা-২০০৭ মোতাবেক কাজ শেষে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কি না, প্রমাণে কী পরিমাণ অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় ও উপকরণ প্রয়োজন হবে।

কোন/কার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন

তফসিল বহির্ভূত অপরাধ বিষয়ে ঢালাও অভিযোগ আসার কারণে কমিশনকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই দুদকে অভিযোগ করার সময় কোন কোন অপরাধ তফসিলভুক্ত সেগুলো জেনে অভিযোগ জমা দেয়া উচিত।

দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে রয়েছে:

১. সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বা উপঢৌকন নেওয়া।

২. বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক যদি বেআইনিভাবে নিজ নামে কিংবা বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।

৩. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মচারি যদি সরকারি অর্থ বা সম্পত্তি আত্মসাৎ কিংবা ক্ষতি সাধন করেন।

৪. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন।

৫. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন।

৬. দুর্নীতি ও ঘুষ থেকে উদ্ভূত অর্থ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ।

৭. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর প্রতারণা জাল-জালিয়াতি ইত্যাদি কাজ।

এ ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ দাবি করলে ঘুষ দেওয়ার আগেই তথ্যটি দুদকের প্রধান কার্যালয় অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণকারীকে ফাঁদ পেতে হাতেনাতে ধরার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

অভিযোগে যা উল্লেখ থাকতে হবে:

কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য দিতে হবে অভিযোগে সঙ্গে। কোনো ব্যক্তি অবৈধ অর্থ ও সম্পদ অর্জন করে থাকলে তাঁর নাম, পদবি-পেশা ও পূর্ণ ঠিকানা দিতে হবে। একইসঙ্গে স্থাবর সম্পদের (বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি ইত্যাদি) অবস্থান, পরিমাণ, আনুমানিক দামসহ ওই সব সম্পদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংক হিসাব, শেয়ার, এফডিআর, সঞ্চয়পত্রের সুনির্দিষ্ট তথ্য, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ধরন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, ধরন ও সুনির্দিষ্ট ঠিকানা এবং বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন-সংক্রান্ত বিবরণ দিতে হবে।

সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মসাৎকৃত অর্থ-সম্পদের পরিমাণ ও সময়কাল, কোন দায়িত্ব থেকে, কখন, কীভাবে আত্মসাৎ করেছেন, ওই আত্মসাতের সঙ্গে আর কারা জড়িত থেকে সহযোগিতা করেছেন- তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহারসংক্রান্ত ও অন্যান্য অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি কখন, কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাভবান হয়েছে বা অন্যকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন বা রাষ্ট্রীয় অর্থসম্পদের ক্ষতি করেছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *