[ ম্যাক নিউজ ডেস্ক ]

পাশে গ্রেপ্তার হিসাব শাখার জুনিয়র হিসাব কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তাদের বেতনের প্রায় দেড় কোটি টাকা মেরে দিয়ে সেই টাকা রেলওয়েরই এক হিসাব কর্মকর্তা উড়িয়েছেন অনলাইনে জুয়া খেলে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর অবশ্য সেই কর্মকর্তা ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কথা স্বীকার করেছেন।

শনিবার (৮ মে) সন্ধ্যা ছয়টায় রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পূর্বাঞ্চল রেলের পাহাড়তলী অর্থ হিসাব শাখার জুনিয়র হিসাব কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।

গ্রেপ্তার ফয়সালের বাবা লুৎফুর রহমান রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তা। চট্টগ্রামের খুলশীর টিকেট প্রিন্টিং কলোনিতে তার বাসা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ‘আইভাস’ সিস্টেমের কারণে অর্থ জালিয়াতির এই ঘটনা প্রকাশ পায়। রেলওয়েতে ‘আইভাস’ সিস্টেম চালু হওয়ার পর অর্থ ও হিসাব শাখা প্রথমে অফিসারদের বেতনভাতা পরিশোধের কার্যক্রম ইএফটির আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করে। পর্যায়ক্রমে এর আওতায় কর্মচারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফয়সাল অকপটে তার দোষ স্বীকার করে জানান, আত্মসাৎ করা টাকার কিছু অংশ তিনি তার তৃতীয় স্ত্রী রাবেয়া আক্তার টুম্পাকে দিয়েছেন জায়গা কেনার জন্য। বাকি টাকা ব্যয় করেছেন অনলাইনে জুয়া খেলে।

ইএফটির আওতায় রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে পাহাড়তলী হিসাব শাখার ডেপুটি ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার মো. শাহজাহান লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর হিসাব শাখার জুনিয়র হিসাব কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদকে আটক করা হয়।

জানা গেছে, ২০১২ সালে জুনিয়র হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে পাহাড়তলী অর্থ ও হিসাব শাখায় যোগদান করেন ফয়সাল মাহমুদ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত রেল পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার বিপুল পরিমাণ টাকা জুনিয়র হিসাব কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ নির্ধারিত একাউন্টের বদলে নিজের একাউন্ট নাম্বার বসিয়ে
এবং একই নামে দুইবার বেতন পোস্টিং দিয়ে কৌশলে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাত করেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তবে ফয়সাল মাহমুদ কেবল ৫০ লাখ টাকা মেরে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে।

রেলওয়ে পাহাড়তলী হিসাব শাখার ডেপুটি ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার মো. শাহজাহান বলেন, ‘এক অফিসারের দেওয়া তথ্যে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে আমি গোপনে চেক করে সত্যতা পেয়ে অর্থ ও হিসাব অধিকর্তাকে (পূর্ব) অবহিত করি। তার তত্ত্বাবধানে বিষয়টি উদঘাটন এবং দ্রুত ওই কর্মকর্তাকে আটকের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধারের কার্যক্রম গ্রহণ করি। মূলত আইভাস সিস্টেমের কারণেই জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন করতে সক্ষম হই।’

এদিকে আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারে অভিযুক্ত কর্মকর্তার চারটি ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধান অর্থ ও হিসাব অধিকর্তা (পূর্ব) কামরুন্নাহার বলেন, ‘আমরা তাকে আটকের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছি। ইতিমধ্যেই বিষয়টি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’

আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ কতো— এক কোটি ৫০ লাখ, নাকি শুধু ৫০ লাখ— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আরও বিস্তারিত যাচাই বাছাই চলছে। এখনও পূর্ণাঙ্গ হিসেব পাইনি। সুতরাং সঠিক সংখ্যা এখনও নিরূপণ হয়নি। আটককৃত ব্যক্তি অপকর্মের কথা স্বীকার করে আমাকে ৫০ লাখ টাকার কথা বললেও টাকার অংক আরো বেশি হতে পারে।’

সিপি




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *