[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]

ঈদ এলে বিষাদ নেমে আসে, কষ্টে ছেয়ে যায় অনেকের মন। যদিও তাদের দেওয়া হয়েছে নতুন লুঙ্গি, ফতুয়া, কাপড়, গেঞ্জি-প্যান্ট, সুস্বাদু ও ভালো ভালো সব খাবার। এরপরও বিষাদ কাটে না।

কারণ তাদের নাড়িছেঁড়া ধনের জন্য যে কষ্ট, পরিবারের সঙ্গে ঈদের দিন সময় কাটাতে না পারার যে কষ্ট-অভিমান সেটাই সারাদিন বিরাজ করে। তাই বৃদ্ধাশ্রমে ঈদ উৎসব মানে বিষাদ-কষ্ট, কান্না আর আহাজারির গল্প।

ক’দিন পরপরই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সড়কে, ডাস্টবিনে কিংবা দীর্ঘ সময় হাসপাতালে পড়ে থাকা অসহায়-অসুস্থ বৃদ্ধকে নিয়ে আসা হয় কল্যাণপুর পাইকপাড়ায় (বাড়ি-৪৬২, সড়ক-৮ দক্ষিণ পাইপাড়া) ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ বৃদ্ধাশ্রমে।

শুক্রবার বিকেলে কথা হয় বৃদ্ধাশ্রমটিতে পাঁচ বছর ধরে থাকা মুন্সিগঞ্জের বৃদ্ধা পারুল বেগমের (৬৫) সঙ্গে।

অভিমানের সুরে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না। আমি এইহানেই ভালো আছি। এইহানে আশপাশে যারা আছে তাদের লইয়াই আনন্দ। ৫ বছর ধরে আশ্রমে আছি, পোলায় তো খোঁজ-খবর লয় নাই। ঈদের দিন দেহাও করতে আসে নাই। সেই পোলার ঘরে ফিরি কেমনে?

শুধু পারুল বেগমই নন, এরকম আরও শতাধিক বৃদ্ধ বাবা-মায়ের আশ্রয় এখন কল্যাণপুরস্থ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে। কিন্তু কারোরই ওই বৃদ্ধাশ্রমে আসার গল্প স্বাভাবিক নয়, হতভাগা সন্তানরা কেউ মাকে ফেলে গেছেন, রাস্তায়, মাজারে, হাসপাতালে। এরপর তাদের ঠাঁই চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমে।

প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির আশ্রয়ে রয়েছে ১১০ বৃদ্ধ মা ও বাবা। এছাড়াও প্রতিবন্ধী, পরিচয়হীন অসহায় ১৮ শিশুর ঠাঁই হয়েছে। এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তির দাফন করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। মানবসেবায় প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছেন এ বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মিল্টন সমাদ্দার স্আমাদের এখানে বৃদ্ধ মা-বাবা আছে, পরিবার থেকে বিতাড়িত, বিচ্ছিন্ন শিশুও রয়েছে। এখন তো মিডিয়ার আধুনিক যুগ, কোনো বৃদ্ধ মা-বাবার পরিবারের জন্য পোস্ট দিলে বা বিজ্ঞপ্তি হলে অনেকে যোগাযোগ করেন। কিন্তু আজ(শুক্রবার) ঈদের দিন হওয়া স্বত্ত্বেও দুঃখজনক যে এখানে থাকা কোনো বৃদ্ধ বাবা-মা’কে দেখতে কোনো পরিবার আসেনি।

মিল্টন বলেন, আমি একা মানুষ, চাইলেও এসব বাবা-মা’র জন্য ভালো কিছু সব সময় করতে পারি না। হয়তো শুভাকাঙ্খিদের সহযোগিতায় ঈদের দিনে তাদের ভালো খাবার, কাপড়-চোপড় দিতে পেরেছি। কিন্তু ঈদের দিনে পরিবারের সঙ্গে থাকা, নাতি-পুতির মুখ দেখা, সময় কাটানোর মধ্যে যে আনন্দ! সেটা তো ভাই আমি তাদের দিতে পারছি না। আমার মনে এখানে যারা আছেন, তাদের সন্তানদের উচিত তাদের নিয়ে যাওয়া। সেটা না পারলে অন্তত দেখতে আসা। ঈদের দিনে সময় দেওয়া। তবুও তাদের দিল ঠান্ডা হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *