[ম্যাক নিউজ রিপোর্টঃ-এ আর আহমেদ হোসাইন
দেবীদ্বার- প্রতিনিধি]
দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা থেকে বুধবার রাতে উদ্ধার হওয়া পালিয়ে আসা কাবেরী আক্তার (১০) নামে একটি মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ।
ওই মেয়েটি দু’বছর একটি বাসায় গৃহবন্ধী থেকে বুধবার কৌশলে মুক্তি পেলেও পুলিশ তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করতে না পেরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে তাদের সেইফ কাষ্টডিতে হস্তান্তর করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহা সড়কের দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা বাস ষ্টেশনের আশপাশে মেয়েটিকে ঘুরাঘুরি করতে দেখেন স্থানীয়রা। মেয়েটির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ছিল এবং কথা বলতে যেয়ে অশ্রশিক্ত হয়ে পরে, কেউ যেন তাকে তাড়া করছে এমন আচরণ দেখা যায় তার মধ্যে। সে রোহিঙ্গা সদস্য কিনা তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
পরে স্থানীয়রা ফোনে ৯৯৯-এ পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে ৯৯৯’র বরাতে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) ওমর ফারুকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
মেয়েটি জানান, মুরাদনগর এক মহিলা ডাক্তারের বাসায় দু’বছর গৃহবন্ধী ছিল। সেখান থেকে বুধবার বিকেলে কৌশলে পালিয়ে আসে। পথ ঘাট চেনা না থাকায় এবং সাথে টাকা পয়সা না থাকায় পায়ে হেটে হেটে এ এলাকায় এসেছে।
উদ্ধার হওয়া মেয়েটির নাম, পরিচয় ও তার এখানে আসার গল্প নিয়েও তৈরী হয়েছে নানা রহস্য, পুলিশকে দেয়া তার পরিচয় যাচাই করে সত্যতা পাননি পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া মেয়েটি তার নাম পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, তার নাম- কাবেরী আক্তার (১০), পিতা- মোঃ সোহাগ হোসেন, মাতা- মোসা: ফিরোজা বেগম, গ্রাম- মরণগোনা, উপজেলা- পেকুয়া, জেলা- কক্সবাজার। ওই ঠিকানা যাচাই করে পেকুয়া উপজেলার স্থলে চকরিয়া উপজেলার নাম পেয়েছে পুলিশ।
তবে ওই মেয়েটি আরো জানায়, প্রায় ২ বছর পূর্বে নিজ এলাকায় একটি মেয়ের সাথে দেখা হয়, ওই মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি বাসায় কাজ করব কিনা ? আমি বলেছি কাজ করব। তখন ওই মেয়েটি আমাকে বলে চলো, আমি বললাম মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসি, তখন ওই মেয়েটি আমাকে জানায় আমার মায়ের সাথে কথা হয়েছে, আমি রাজি হলেই আমাকে নিয়ে যেতে।
আমি তার সাথে চলে আসি, সে আমাকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় নিয়ে আসে এবং মুরাদনগর এলাকায় একটি ৪ তলা ভবনে একজন মহিলা ডাক্তারের বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে রেখে দেয়। পরবর্তীতে ওই মেয়েটিকে আর দেখিনি, তার নাম পরিচয়ও জানিনা।
ওই বাসায় থাকাকালিন দুই বছরের মধ্যে একদিনের জন্যও বের হতে দেয়নি। আমাকে ওই ডাক্তার মেডাম প্রায়ই মারধর করত, সীমাহীন নির্যাতন করত। সকালে বেরহলে অনেকরাতে বাসায় ফিরতেন। তার দুটি মেয়ে সন্তান আছে। একটি আমার চেয়ে একটু ছোট, আর একটি ৩ বছর হবে। তবে সব সময় ছোট বাচ্চাটি সাথে নিয়ে যেতেন। তার স্বামী কি করত, স্বামীর নাম কি ? মহিলা ডাক্তারের নাম কি, কোথায় ডাক্তারি করেন, তার দুই কণ্যা সন্তানের নাম কি ? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি। তাকে গৃহবন্ধী করে রাখায় ওখানকার প্রতিবেশীদের চেনেনা। রাস্তাঘাট চেনার প্রশ্নই উঠেনা। শুধু বলতে পারে ডাক্তার মেডামের বাসায় থাকত, যে বাসায় থাকত সে বাসাটি ছিল ৪তলা ভবনের।
পুলিশ এবং সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাকে মুরাদনগর এলাকায় নিয়ে গেলে যে বাসায় দির্ঘ দু’বছর গৃহবন্ধী ছিল ওই বাসাটা দেখিয়ে দিতে পারবে কিনা ? জবাবে সে জানায়, আমি ওই বাসা চিনবনা। তাই পুলিশও আগ্রহ করে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আজ বিকেলে কুমিল্লা একটি সেইফ কাষ্টডিতে হস্তান্তর করেন।
এ ব্যপারে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) ওমর ফারুক বলেন, হয়তো মেয়েটি প্রতারক চক্রের হাতে পড়ে দু’বছর ধরে মুরাদনগর একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে গৃহবন্ধী ছিল, ওখান থেকে কৌশলে পালিয়ে অনিশ্চিত পথে পা বাড়িয়ে দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা বাস ষ্টেশনের পাশে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে আটক হয়, পরে স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি অবগত করলে আমরা রাত পৌনে ১২টায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী কক্সবাজরের পেকুয়া থানার কথা বললেও আমরা অনুসন্ধানে চকোরিয়া থানা নিশ্চিত হই, তবে তার পিতা মাতার পরিচয় সংগ্রহ করতে পারিনি। মুরাদনগর যে বাসায় ছিল ওখানে যেতে চাইলে মেয়েটি বাসাটি চিনবেনা বলে জানায় এবং যেতে রাজি হয়নি। তাই আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেইফ কাষ্টডিওতে হস্তান্তর করি। পরে ঠিকানা খুঁজে পেলে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।