[ম্যাক নিউজ রিপোর্টঃ-নেকবর হোসেন
কুমিল্লা প্রতিনিধি]
কুমিল্লার বাজার মৌসুমি ফলে ভরপুর দাম নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তোষ পালাবদল এসেছে প্রকৃতিতে। বছর ঘুরে আবারও এসেছে জ্যৈষ্ঠ মাস। জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাসও বলা হয়ে থাকে। মধুমাসের এই সময়ে সারাদেশেই চোখে পড়ে গ্রীষ্মকালীন নানান ধরনের ফলের। প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলে ছেয়ে গেছে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন ফলবাজার। তবে মৌসুমি হলেও মধুমাসের ফলগুলোর দামও কিন্তু বেশ চড়া। তাই দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ।
ফল বিক্রেতারাও দাম বেশি থাকার কথা স্বীকার করছেন। তাদের ভাষ্য, পাইকারি বাজার থেকে গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বেশি দামেই ফল কিনতে হয়েছে তাদের। যার কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
সরেজমিনে কুমিল্লা নগরী ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাজারেই গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলের সমারোহ। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, তালের শ্বাস, আনারস ইত্যাদি। এছাড়া মৌসুম শেষ হওয়ায় বিদায়ের পথে থাকা বেল, বাঙ্গি ও তরমুজের মতো ফলও দেখা যাচ্ছে বাজার গুলোতে। এসব ফলের গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে প্রতিটি বাজারে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলের মধ্যে বর্তমানে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু। এছাড়া নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ও ভ্যানে করে মৌসুমি ফল বিক্রি করছেন অনেকেই। বাজারগুলো থেকে কিছুটা কম দামেই ফল বিক্রি হচ্ছে ভ্যানের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে।
নগরীর অন্যতম বৃহৎ ফলের বাজার টমছমব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমি ফল বিক্রিতে। তারা মূল দোকানের সামনের অংশে মৌসুমি ফল রেখে ক্রেতাদের ডাকছেন এবং তাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এ বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। এছাড়া হিমসাগর, লেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের আমও শোভা পাচ্ছে ফল দোকান গুলোতে। তবে লিচু পুরোদমে পরিপক্ক হলেও আম মাত্র আসতে শুরু করেছে বাজারে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ফল বাজারের বেশির ভাগ অংশ থাকবে মিষ্টি ও রসালো আমের দখলে।
টমছমব্রিজ ফল বাজারের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান রাজিব জানান, এই বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। প্রকার ভেদে প্রতি এক শত লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। কিন্তু এরপরও ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি লিচুই কিনছেন। প্রতিটি দোকানেই অন্যান্য ফলের তুলনায় লিচু বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী পারভেজ মিয়া বলেন, আমের বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি। তবে লিচুর এখন ভরপুর মৌসুম। তাই লিচুর ব্যবসা জমজমাট। এছাড়া মৌসুমের শেষ দিকে হলেও এখনও বাজারে তরমুজ আছে। তিন’শ থেকে ৫’শ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। আমের বেচাকেনা জমে উঠবে আগামী সপ্তাহ থেকে।
মৌসুমি ফল কিনছেন ক্রেতা
এ বাজারে ফল কিনতে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, ৩০০ টাকা দিয়ে এক’শ লিচু কিনেছি। বাজারে ভরপুর মৌসুমি ফল থাকলেও দাম চড়া। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেকে পরিবারের সদস্যদের এসব মৌসুমি ফল খাওয়াতে পারছে না। প্রশাসনের উচিত নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা। যাতে সকল শ্রেণির ক্রেতারা এসব মৌসুমি ফল কিনতে পারে।
নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে গিয়েও দেখা যায় নানান ধরনের ফলের সমারোহ। এ বাজারে ভারত সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি কাঁঠাল ও আনারস বিক্রি জমজমাট। সীমান্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা বাইসাইকেলে করে মৌসুমি ফল কাঁঠাল, আনারস ও কলা এনে এই বাজারে বিক্রি করছেন। রাণীর বাজার, নিউ মার্কেট, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা জেলখানা সড়ক এলাকাতেও বসে এই ফলের পসরা। তবে লিচুর মতো কাঁঠালের দামও গতবারের চেয়ে এবার কিছুটা বেশি বলে জানা যায়। ছোট আকারের একটি কাঁঠাল কিনতে ক্রেতাদের খরচ হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি। আনারসের হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় তালের শ্বাস বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে।
নগরীর হাউজিং এলাকায় ভ্যানে করে মৌসুমি ফল বিক্রি করেন বিল্লাল হোসেন নামের এক যুবক। বিল্লাল হোসেন বলেন, আগে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতাম। এখন মৌসুমি ফলের চাহিদা বেশি। তাই ফল বিক্রি করছি। দাম কিছুটা বেশি হলেও মানুষ ফল কিনছেন। এতে আমাদের লাভও ভালো হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.আবু সাঈদ বলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশনায় আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ সব সময় মাঠে আছেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের নানান ধরনের দেশীয় ফল এখন বাজারে এসেছে। এগুলো মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমরা চাই মানুষ যেন ফরমালিন মুক্ত নিরাপদ ফল খেতে পারেন। এজন্য ফলের বাজারগুলোতেও আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। কোথাও অনিয়ম পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।