[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]
মিসেস চৌধুরী, ৪৫ বছর বয়স উচ্চরক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন। তার ওজন বেশি। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি কোন ধরনের চালের ভাত খেলে ওজন কমে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন।
আমরা সাধারণত ৩-৪ ধরনের চালের কথাই জানি বা দেখে থাকি, পৃথিবীতে মোটামুটি ৪০,০০০ ধরনের ধান বা চাল পাওয়া যায়। লাল চাল প্রধানত ভারত, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে চাষ করা হয়।
লাল চাল ও বাদামি চালের মধ্যে পার্থক্য
খাদ্যমূল্য বিচারে লাল চাল ও বাদামি চালের তফাৎ কম, লাল চালে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে শরীরকে রক্ষা করে। বাদামি চাল পৃথিবীর সব দেশে চাষ করা হয়।
লাল চালের রং বাদামি বা লাল কেন
লাল চালে প্রচুর এনথ্রোসায়ানিন নামক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা লাল রঙের রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে পাওয়া যায়।
এনথ্রোসায়ানিনের উপকারিতা
এনথ্রোসায়ানিন শরীরে প্রদাহ কমায়, এলার্জি কমায়, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
লাল চালে কী কী খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়
প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাংগানিজ, ক্যালশিয়াম ও সেলেনিয়াম পাওয়া যায়।
লাল চালে প্রাপ্ত ম্যাংগানিজ কী উপকার করে
বিপাকীয় কাজে সাহায্য করে।
ম্যাগনেশিয়াম যা লাল চালে পাওয়া যায়, কী উপকার করে
ম্যাগনেশিয়াম মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা কমায়, রক্তচাপ কমায়, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম একত্রে কী উপকার করে
ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম একত্রে স্বাস্থ্যকর হাড়, স্বাস্থ্যকর দাঁত, গিরা ব্যথা ও ফোলা এবং হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
সেলেনিয়াম কী উপকার করে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে।
লাল চালের উপকারিতা
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার বেশি থাকলে অন্ত্রে খাবার হজমের প্রক্রিয়া আস্তে আস্তে হয়, ফলে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় সুগারে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া কমে যায়, ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে। এ চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের খাওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। রক্তনালীতে ব্লক হওয়ার ঝুঁকি কমায়, হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়, রক্তের চর্বির মাত্রা ও সুগারের মাত্রা কমায়। প্রতিদিন ১ কাপ লাল চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমে। লাল চালের ভাতে ক্ষুধা কম লাগে। লাল চালের ভাত খেলে আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ফাইবারের ১০ ভাগ পূরণ হয়। লাল চাল ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও স্থূলতা প্রতিরোধ করে।
প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানে পূর্ণ
ফাইবার ছাড়াও লাল চালে প্রচুর পরিমাণে জিংক, আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি১, বি২ ও বি৬, ম্যাংগানিজ, সেলেনিয়াম, আমিষ ও পটাশিয়াম থাকে। আয়রন লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন তৈরিতে লাগে যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে। জিংক ও ম্যাংগানিজ রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে ও ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। ম্যাংগানিজ শরীরে বিপাক প্রক্রিয়াও অংশগ্রহণ করে। ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম শরীরের হাড় সুস্থ ও সবল করে। ভিটামিন বি৬ ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে, সেরোটোনিন ও নরইপিনেফরিন হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে যা আমাদের মুড নিয়ন্ত্রণ করে। পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে ও রক্তচাপ কমায়, হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। ভিটামিন বি২ খাবার ভেঙে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। সেলেনিয়াম ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে শরীর রক্ষা করে ও ডিএনএ তৈরিতে সাহায্য করে।
এনথোসায়ানিন লাল চাল ছাড়াও কালো চালে ও সব ধরনের লাল ও নীল রঙের খাবারে যেমন ব্লুবেরি, রাস্পবেরিতে পাওয়া যায়।
লাল চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাত্র ৫৫ আর সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০। তাই লাল চাল ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে ও নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
লাল চালের এনথোসায়ানিন ত্বকের ভাঁজ কমায়, বয়স ধরে রাখে। এন্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে সূর্যালোকের ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করে। এটা ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে ও অন্যান্য ত্বকের রোগ যেমন সোরিয়াসিস প্রতিরোধ করে।
গর্ভবতী ও স্তনদায়ী মায়ের জন্য লাল চাল স্বাস্থ্যকর।
অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট কমায় ও প্রতিরোধ করে। হাড় ভালো রাখে।
লাল চালে কি ক্ষতিকর কোন দিক আছে
কিছু কিছু গবেষণাতে এটা প্রমাণিত যে, লাল চালে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফাইটিক এসিড আছে যা অন্ত্রে লোহা বা আয়রন ও ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয়, ফলে লাল চালের ভাতের সঙ্গে যদি এমন খাবার খাওয়া হয় যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও আয়রন থাকে তবে এ সমস্যা হতে পারে, তাই লাল চালের ভাত খাওয়ার সময় অধিক আয়রন ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা