[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]
ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনানকে খোঁজ পাওয়া গেছে। তিনি রংপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কোতায়ালী থানার ওসি। এর আগে বর্তমান সময়ের আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান তাঁর গাড়ীচালক ও দুই সঙ্গীসহ গত ১০ জুন মধ্যরাতে নিখোঁজ হন। প্রায় ৬ দিন পেড়িয়ে গেলেও এখনও তার সন্ধান মেলেনি। জানা যায়, রংপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে রাত আড়াইটায় স্ত্রীর সাথে সর্বশেষ কথা হয় আদনানের। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার বা সঙ্গীদের। এর আগে আদনানের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর দারুস সালাম এবং মিরপুর থানায় গেলে কোনো থানাই জিডি বা মামলা নেয়নি বলেও অভিযোগ করছে তাঁর পরিবার।
আদনানের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল। তার ফ্যান-ফলোয়াররা হ্যাশট্যাগ দিয়ে তার খোঁজ পাওয়ার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। জিডির তথ্য ধরে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ-সংলগ্ন গলিতে তার পৈতৃক বাসা। বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শালবন এলাকার চেয়ারম্যানের গলিতে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। আদনানের স্ত্রীর নাম হাবিবা নূর। তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বসয়ী একটি ছেলেসন্তান আছে তাঁর।
আদনানের স্ত্রী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৩৭ মিনিটে তার (আদনান) সঙ্গে শেষ কথা হয়। উনি তখন গাবতলী ছিলেন। এরপর রাত ৩টা থেকে তার ফোন বন্ধ পাই, এখন পর্যন্ত নম্বর বন্ধই পাচ্ছি।’ তিনি আরো জানান, নিখোঁজ হওয়ার সময় তার সঙ্গে গাড়িচালকসহ আরো তিনজন সহকর্মী ছিলেন। সাবেকুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, কোথায় মামলা করব, কার কাছে অভিযোগ করব? মামলা করব কী, কেউ তো জিডিই নিতে রাজি হচ্ছে না। দারুস সালাম থানা কিংবা মিরপুর থানা কেউই মামলা নেয়নি। থানায় ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। কোনো থানাই দায়িত্ব নিচ্ছে না, এক থানা আরেক থানাকে দেখিয়ে দিচ্ছে। তবে রবিবার সকালে রংপুর সদর থানায় একটি জিডি হয়েছে আদনানের মায়ের পক্ষ থেকে।
অভিযোগের বিষয়ে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তিনি কোথা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন, সেই লোকেশনটা তো আমরা নিশ্চিত না। তিনি গাবতলী থেকে নিখোঁজ হয়েছেন, সেটা তো আমরা জানি না। সে ক্ষেত্রে যেখান থেকে তিনি রওনা হয়েছেন, সেই রংপুর অথবা তার ঢাকায় যেখানে বাসা, সেখানে জিডি হতে পারে বা মামলা হতে পারে।
উল্লেখ্য, আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনানের দাদা বাড়ি রাজশাহী শহরে। অনেক আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে ত্বহা ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে বাবার বাড়িতে ঠাঁই নেন আজেদা বেগম। ত্বহার ছোটবোন কারমাইকেল কলেজে অনার্সে পড়ালেখা করছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ত্বহা। এক সময় রংপুরের ক্রিকেট অঙ্গনে সবার পরিচিত ছিলেন তিনি। রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে দর্শন বিষয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজে অনার্সে ভর্তি হন। মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। কারমাইকেলে পাড়াকালীন ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝুঁকে পড়েন এই ক্রিকেটার। কোনো আরবি শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা না করলেও ইসলাম ধর্মের প্রচুর বই পড়তেন এবং গবেষণা করতেন। ফলে অল্প দিনেই হয়ে ওঠেন একজন ভালো ইসলামী বক্তা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মসজিদে ইসলামিক বিষয়াদি নিয়ে আলেচনা করতেন। বিয়ের পর ত্বহা তার স্ত্রী এবং দেড় বছর বয়সী ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে ভাড়াবাসায় থাকেন।