[ ম্যাক নিউজ ডেস্ক ]

বাবা-মা একজন সন্তানের সবচেয়ে কাছের মানুষ। উভয়ে সম্পূর্ণ আলাদা সত্তা হলেও দুইজন একই সূত্রে গাঁথা। প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা অসামান্য। কারও অবদান কারও চেয়ে কম নয়।

আমাদের আশপাশের অনেকের বাবা-মা নেই। তারা পার্থিব জীবন কাটিয়ে অনন্ত জীবনে পাড়ি দিয়েছেন। তাদের বিচ্ছেদ-বেদনায় সন্তনেরা অশ্রুর পানিতে চোখের পাতা ভেজান। কিন্তু শুধু কাঁদলেই কি কি মৃত বাবা-মায়ের আত্মা শান্তি পাবে? নাকি সু-সন্তান হিসেবে তাদের জন্য কোনো দায়িত্ব আছে? তাদের জন্য কি দোয়া করা যায় না?

এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যু বরণ করলে— তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়,তবে তিনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না। সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান— যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান— যে তার মৃত বাবা মায়ের জন্য সবসময় দোয়া এবং আমল করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৩১০)

উত্তম সন্তান অবশ্যই বাবা-মায়ের জন্য কল্যাণকর হয়ে থাকেন। তাদের জন্য দোয়া করে আখেরাতে সওয়াব পৌঁছান। তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। বলা বাহুল্য যে, কোনো সন্তান যখন মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করে, আল্লাহ তাদের নেয়ামত ও সুখ-শান্তি আরও বাড়িয়ে দেন।

পবিত্র কোরআন শরিফে স্পষ্টতই বর্ণনা করা হয়েছে, আপনার মৃত বাবা-মায়ের জন্য আপনি কি দোয়া করবেন।

এক. শান্তির দোয়া

মা-বাবার জন্য শান্তির দোয়া করা সন্তানের কর্তব্য। মা-বাবার অবদান ও ভূমিকার বদলা সন্তান জীবনেও আদায় করতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا
٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤]

উচ্চারণ : রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।

অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৪)

দুই. ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি পবিত্র কোরআনে বলেন-

رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١]

উচ্চারণ : রাব্বিগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)

তিন. মা-বাবাসহ অন্যদের জন্য দোয়া

উপরেল্লিখিত দোয়া দুইটি ছাড়াও আরও একটা বিশেষ দোয়া রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের শিখিয়েছেন, যেন মৃত বাবা-মায়ের জন্য বিশেষভাবে তারা এই দোয়া করে-

رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨

উচ্চারণ : রাব্বিগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মু’মিনা; ওয়ালিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত। ওয়ালা তাজিদিজ জা-লিমিনা ইল্লা তাবারা।

অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ক্ষমা করুন এবং আপনি জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৮)

অতএব, বাবা-মায়ের জন্য বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়াও প্রত্যেক মোনাজাতে বাবা-মায়ের নাম ধরে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে বিশেষভাবে জরুরি।

আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *