[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]

করোনা পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে দিন কাটছে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের-

মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে দিন কাটছে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের। স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমানো এ মানুষগুলো এখন দুঃস্বপ্নের চোরাবালি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন। একদিকে কয়েক হাজার বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরে আটকে আছেন, তারা কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় কঠোর লকডাউনে ঘরে বসে থাকা অনেকে বেকার সময় পার করছেন। চলমান সময়ে বহুমাত্রিক সংকটে তাদের আয়ের পথ এখন বন্ধ।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে, এতে মালয়েশিয়ান কর্মীদের চাকরির ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। ফলে সরকার আগে নিজ দেশের নাগরিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে। এদিকে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জুনের প্রথম সপ্তাহে কঠোর লকডাউনে চলে যায় মালয়েশিয়া। বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চাকরি হারান অনেকে। দেশে থাকা অনেক অভিবাসী শ্রমিকের পরিবারেও নেমে এসেছে দুর্দশা।

কুয়ালালামপুর শহরের জালান ইপুহ এলাকায় থাকেন নরসিংদীর সোহাগ মিয়া। পাঁচ বছর ধরে দেশটিতে থাকলেও পরিস্থিতির কারণে এই মুহূর্তে কোনো বৈধ ভিসা নেই তার। করোনার কারণে কয়েক মাস ধরে কাজও নেই। এ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। সোহাগ বলেন, প্রবাস জীবনে এমন কষ্টের দিন আগে কখনো আসেনি। দেশে ফিরে যাব সেই রাস্তাও নেই। আর দেশে ফিরেই বা কি করব। তাই সব কষ্ট সয়ে ঘরে বসে আছি, বাইরে যাওয়ার কোনো পথ নেই।

মালয়েশিয়ায় কঠোর লকডাউনেও চলমান রয়েছে ধরপাকড় অভিযান। জানা গেছে, ‘আটক কেন্দ্র’ সংখ্যা বাড়িয়ে অবৈধ প্রবাসীদের ধরপাকড়ে নেমেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদিনের বরাত দিয়ে মালয়েশীয় গণমাধ্যম বলছে, চলমান লকডাউনের মধ্যেও অবৈধ বিদেশি অভিবাসীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। জাতীয় নিবন্ধকরণ বিভাগ (এনআরডি) ও পুলিশদের সঙ্গে যৌথভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ। গত ৬ জুন ও ২১ জুন অভিবাসন বিভাগের বড় দুটি অভিযানে ৪৭৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর মধ্যে ১৬৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। একে তো কাজ নেই, তার ওপর ধরপাকড় অব্যাহত থাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মধ্যে।

কুমিল্লার নূর উল্লাহ জানান, তারা চার জন একসঙ্গে একটি মেসে থাকেন। কারোরই বৈধ ভিসা নেই। দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে তাদের সর্বনাশ হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই তারা কাজ হারিয়েছেন। ধরপাকড় অব্যাহত থাকলে আরও বেকায়দায় পড়তে হবে।

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জরুরি। প্রবাসীরা বলছেন, বাংলাদেশি অভিবাসীরা যেন নিরাপদ থাকেন, সেজন্য সরকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে পারে।

ধরপাকড় অভিযানের বিষয়ে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, এখানে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিক রয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়ান। অবৈধদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান দ্বিতীয়। মাঝে মধ্যেই মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক ধরপাকড় তাদের রুটিন কার্যক্রমের অংশ। এটা বাংলাদেশিদের উদ্দেশে নয়, বরং সব অবৈধ বিদেশিদের জন্য পরিচালিত।

মিশন বলছে, পৃথিবীর সব দেশেই অবৈধ নাগরিক থাকলে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যোগাযোগের মাধ্যমে এ ধরনের ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাই পূর্বক তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে আসছে। বিষয়টি একান্তই রুটিন বিষয়। এ বিষয়ে অতি মাত্রায় প্রচার-প্রচারণা একদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অযথা ভীতির সঞ্চার করতে পারে, অন্যদিকে বিদেশে বৈধভাবে বসবাসরত লাখ লাখ বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তির ক্ষতিসাধন করতে পারে।

জানা গেছে, গতবছরের ১৬ নভেম্বর অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা দিতে রিক্যালিব্রেশন নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করে মালয়েশিয়া সরকার। এ প্রোগ্রামে নিয়োগকর্তা কর্তৃক নিবন্ধন ও স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়। রিক্যালিব্রেসি প্রক্রিয়ায় প্রথমে শুধু নির্মাণ, উৎপাদন, চাষ ও কৃষি খাতে সোর্স কান্ট্রি বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধতার জন্য তাদের নিয়োগকর্তাদের অনলাইনে আবেদন করার কথা ছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণহানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনে চলে যায় সরকার। বন্ধ হয়ে যায় অফিশিয়াল কার্যক্রম। যদিও অনলাইনে কার্যক্রম চলছে, তবে ধীরগতির কারণে অনেকে বৈধতা নিতে আবেদন করতে পারেননি।

এ পর্যন্ত রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার বিদেশি অস্থায়ী জব ভিজিট পাসের (পিএলকেএস) জন্য আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিন। প্রক্রিয়াটি চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে। তবে বৈধতার জন্য আবেদনের সময় বাড়ানো হবে কি না এখনও জানা যায়নি। তবে রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচির সময় বাড়াতে ১৫টি দেশের কূটনৈতিকরা মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *