[ ম্যাক নিউজ ডেস্ক ]

দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, থেমে নেই মৃত্যুও। করোনা শনাক্ত বা উপসর্গ দেখা দেওয়া বেশির ভাগ রোগীদেরই হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেনের অভাবে পড়ছেন বেকায়দায়। এই দুঃসময়ে অক্সিজেন সংকটে ভুগতে থাকা মানুষের মাঝে সিলিন্ডারের অক্সিজেন সরবরাহ এবং সেবা দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছে জয়পুরহাট জেলা পুলিশের ফ্রি ‘অক্সিজেন ব্যাংক’।

মানবসেবার ব্রত নিয়ে পুলিশই এ সেবার হাল ধরেছে। জেলার যেকোনো এলাকায় যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন তারা যেকোনো সময় ০১৭৩৭৫৯৯৬৬৬ নম্বরে একটি কল দিয়ে ঠিকানা জানালেই তাদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অন্যতম অনুসঙ্গ হলো অক্সিজেন। যা হাসপাতাল ছাড়া মিলছে না। কিন্তু হাসপাতালে গেলে সেখানে রয়েছে বেড সংকট। অনেক রোগী আছেন যারা অক্সিজেনের সুবিধা পেলেই বাড়িতেই সুস্থ হতে পারেন। তাদের জন্যই ‘অক্সিজেন ব্যাংক’।

জয়পুরহাট জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেছে। করোনার এই সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অনেক অসহায়, দুস্থ মানুষের ফোন পাচ্ছিলাম। করোনাজনিত কারণে যারা শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তখন ভাবলাম, আমরা মানবিক সহায়তা করতে পারি। এই চিন্তা থেকেই আমরা ১৯ জুন অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম চালু করি।

জয়পুরহাট জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞার হাত ধরে ১৯ জুন শুরু হয় এই সেবার যাত্রা। প্রথমে ৮টি সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩২টিতে। শুরুর মাত্র একরমাসের মধ্যেই পঞ্চাশোর্ধ রোগী পেয়েছেন এই সেবা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাইকরতলী এলাকার অক্সিজেন সেবাগ্রহীতার ছেলে মনিরুজ্জামান বাপ্পি বলেন, আমার মা অসুস্থ হওয়ার পর আমি জয়পুরহাট পরিবারের (ফেসবুক গ্রুপ) সহায়তায় পুলিশের অক্সিজেন সেবার নম্বর পাই। সেদিন রাত সাড়ে ৩টার সময় আমি কল করি। মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে তারা পানিতে ভিজে আসে এবং অক্সিজেন দিয়ে যায়। এর ১৫ মিনিটের মধ্যে আমার মা সঠিক মতো শ্বাস নিতে পারে।

সেবাগ্রহীতার স্বামী আব্দুল মতিন বলেন, আমার স্ত্রীর গত ২৪ জুন থেকে জ্বর আক্রান্ত। কয়েক দিন পর আবার ভালো যায়। ৩০ জুন রাতে আবার অসুস্থ হয়। তখন অক্সিমিটার দিয়ে মেপে দেখি তার অক্সিজেন ৮০-এর নিচে। একটু পর তাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে গেলে জ্বর কমে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসি। পরে রাত ৩টায় আবার অসুস্থ হয়। তখন অক্সিজেনের জন্য পুলিশকে কল দিই। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ ভাইয়েরা পানিতে ভিজে অক্সিজেন নিয়ে আসে। পরে অক্সিজেন দিলে আমার স্ত্রী সুস্থ হয়। আমি এসপি (পুলিশ সুপার) স্যার ও পুলিশ ভাইদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ।

সেবাগ্রহীতা সাবেকুন নাহার রূপালী বলেন, আমি করোনা রোগী ছিলাম, খুবই অসুস্থ হওয়ার পর আমাকে জয়পুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে কোনো অক্সিজেন পাইনি বা তারা কোনো ওষুধও দেয়নি। প্রাথমিকভাবে দেখে বের করে দেয়। সেখান থেকে বাসায় আসার পর আমার স্বামী ও ছেলে পুলিশের কাছে ফোন দিলে পুলিশ বাসায় এসে আমাকে অক্সিজেন দিয়ে যায়। এরপর আমি সুস্থ হই।

অক্সিজেন ব্যাংক সেবায় কর্মরত পুলিশ সদস্য ও জেলা পুলিশ হাসপাতালের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট আরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফোন পাওয়ামাত্র আমরা রোগীর বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। অক্সিজেনই নয়, রোগীর ক্যানোলা পরীক্ষা, ইনজেকশন পুশ করাসহ রোগীর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

কয়েক দিন আগে সদর উপজেলার এক বাসা থেকে রাত ৩টার দিকে ফোন পাওয়া পর সেখানে গিয়ে অক্সিজেন দিয়ে আসা হয়েছে। তখন থেকেই সেবাটি আমাদের পুলিশ সুপার স্যার চালু করেছেন। আমি একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের এই সেবা করতে পেরে খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, জয়পুরহাট জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেছে। করোনার এই সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অনেক অসহায়, দুস্থ মানুষের ফোন পাচ্ছিলাম। করোনাজনিত কারণে যারা শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তখন ভাবলাম, আমরা মানবিক সহায়তা করতে পারি। এই চিন্তা থেকেই আমরা ১৯ জুন অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম চালু করি।

তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করছি, তা নয় অক্সিজেন প্রদানের পর আমাদের দক্ষ টিমটি ওই রোগীদের ফোন দিয়ে ঠিকমতো খোঁজখবর নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা যাদের অক্সিজেন প্রদান করেছি, তারা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত জেলা পুলিশ প্রধান হিসেবে এই সেবা দিতে পেরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *