[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া ৯ হাজার পিস ইয়াবা অল্পমূল্যে কুমিল্লার বিভিন্ন মাদক কারবারির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল আটক যাত্রী সাদ্দাম। মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কেনা ইয়াবাগুলো সৌদিতে পাচারের পর বেশি মূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্য ছিল তার।
বুধবার (২৮ জুলাই) ভোর ৬টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডিপারচার গ্লাস গেট থেকে ইয়াবাসহ সৌদিগামী যাত্রী সাদ্দামকে আটক করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
এপিবিএন বলছে, ইয়াবা পাচারে তার (সাদ্দাম) সংশ্লিষ্টতা নতুন নয়। ২০২০ সালে সাদ্দাম ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সেই মামলায় সে বর্তমানে জামিনে রয়েছে। এর মধ্যে ইয়াবার বড় নতুন এ চালান তিনি সৌদি আরবে পাচার করতে যাচ্ছিল।
বেলা ১১টার দিকে বিমানবন্দরের কেনপি-১ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এপিবিএন এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, আটক যাত্রী সাদ্দামের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সালাম এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে প্রথমে ওমানের মাস্কাট এবং কানেন্টিং ফ্লাইটে করে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে যাওয়ার কথা ছিল। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তার ফ্লাইট ছিল। তবে সে ভোর ৬টার দিকে বিমানবন্দরে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক বলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করার পর সাদ্দামকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলে সে ইয়াবা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে তার দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৮ হাজার ৯৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
তল্লাশির সময় তার ব্যাগ খুলে উপরে অনেক কাপড় দেখা যায়, নিচেই সেলাই করা ব্যাগের একটি কাভার ছিল। ওই কাভারের ভেতরে কার্বন পেপার ও স্কচটেপ মোড়ানো অবস্থায় এসব ইয়াবা পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, সে ইয়াবাগুলো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বিভিন্ন কারবারির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল। এগুলো যদি সে সৌদি আরবে নিয়ে যেতে পারত, তবে প্রতি পিস এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারত বলে স্বীকার করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম আরও জানায়, তার বাড়ি কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায়। এসব ইয়াবা কুমিল্লার এক চক্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিল। সেখানে ওই চক্রটি তাকে সৌদি আরবে যাওয়ার টিকিট বা ভিসা করে দিয়েছে। ইয়াবাগুলো নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মামের এক প্রবাসীর কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল।
সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা ইয়াবা পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত বেশকিছু সদস্যের নাম পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান জিয়াউল হক।
ইয়াবা পাচার তার এটাই প্রথম নয় উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি ২০২০ সালে সাদ্দাম ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সেই মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছে। এরইমধ্যে ইয়াবার বড় এই চালানটি সে সৌদি আরবে পাচার করতে যাচ্ছিল। বিমানবন্দরে অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষিত স্ক্যানাররা আছেন। আমাদের চেকিংয়ে যদিও সে পার হতে পারত, তবে স্ক্যানারে গিয়ে ধরা পরে যেত। তবে আমরা আগেই তাকে ধরে ফেলেছি।
সৌদি আরবে এসব ইয়াবার গ্রাহক কারা জানতে চাইলে এপিবিএন কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা ইয়াবাসেবী রয়েছেন তারা এবং দেশটির কিছু নাগরিক বর্তমানে ইয়াবা সেবন করছেন।
বিমানবন্দর দিয়ে মাদককারবারি চক্রগুলো প্রতিনিয়ত ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদকের কারবারিরা একটি নতুন ট্রেইন শুরু করেছে, অতিরিক্ত লোভের আশায় ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তারা ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করছে। তবে বিমানবন্দরের স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে তারা অবশ্যই ধরা পড়বে।