[ম্যাক নিউজ ডেস্ক ]
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিধিনিষেধ চলাকালে গ্রাম থেকে কাজে ফেরানো হয়েছে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের। করোনা ঝুঁকি নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে, ভ্যান, অটোরিকশা এবং ট্রাকে গাদাগাদি করে চাকরি বাঁচাতে ঢাকা ও আশপাশের জেলার কারখানায় ফিরছেন শ্রমিকরা। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন পোশাক খাতের শ্রমিকরা। এরই মধ্যে অনেক শ্রমিকের শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
তবে করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের ছুটি ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা দিতে রাজি নয় মালিকপক্ষ। তাদের দাবি, পোশাক খাতে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। এ অবস্থায় বিপুল সংখ্যক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই ছুটি ছাড়া করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে না। যদিও মালিকদের এ যুক্তি মানতে নারাজ শ্রমিক নেতারা।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, গণপরিবহন বন্ধ রেখে শ্রমিকদের কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে শ্রমিকদের সীমাহীন দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ মালিকপক্ষ ও সরকারকেই দিতে হবে।
তিনি বলেন, মালিকরা টেলিফোনে শ্রমিকদের ১ আগস্ট কাজে যোগদানের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে, অন্যথায় চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়। এখন লোক দেখানোর জন্য তারা বলছে, গ্রামে থাকা শ্রমিকদের এখনই কাজে যোগদান বাধ্যতামূলক নয়। এসব শ্রমিকদের সঙ্গে তামাশা, মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
মন্টু ঘোষ বলেন, শত ঝামেলা পেরিয়ে গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শ্রমিকদের ছুটি দিতে হবে, চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বহন করতে হবে মালিক ও সরকারকেই।
কারখানাগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখছি। কোনো শ্রমিকের করোনার লক্ষণ দেখা দিলে আলাদা করে দিচ্ছি। দ্রুতই তাকে ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি না, দেবো না। কারণ আমাদের শ্রমিকদের সংখ্যা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের সঙ্গে আগেই আলোচনা করে মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে যে, ১ আগস্ট থেকে পোশাক কারখানা চালু রাখবে। কিন্তু শ্রমিকরা কীভাবে গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফিরবে তার চিন্তা একবারও করেনি তারা। ফলে শ্রমিকরা চার-পাঁচ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে, হেঁটে, রিকশা-ভ্যানযোগে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কর্মস্থলে ফিরেছেন, তাদের করোনা হলে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ মালিকপক্ষকে দিতে হবে।
এদিকে ব্যবসায়ী নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, পোশাক খাতের শ্রমিকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম। কারণ তারা মাস্ক পরেন, সবাই সচেতন থাকেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশে কারখানায় কাজ করেন। তাদের চিকিৎসার বিষয়টি মালিকপক্ষ দেখছে। তবে এবার গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের চিকিৎসার দায়ভার নিচ্ছেন না তারা।
কারণ হিসেবে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা বলছেন, এবার কারখানায় আসা শ্রমিকরা সবাই গ্রাম থেকে সরাসরি কাজে যোগ দিয়েছেন। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তারা আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ ছুটি দেওয়া হবে। কিন্তু কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
কেউ আক্রান্ত হলে তাদের জন্য আলাদা আইসোলেশন কেন্দ্র রয়েছে। আমরা সেখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তারা বলছেন, আমরা সরকারের কাছে দাবি করেছিলাম, ঈদের পর অর্থাৎ ২৫-২৬ জুলাই থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য। স্বল্প সময় কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা বাড়ি যেতেন না। বাসায় থাকলে তারা নিরাপদে থাকতেন। কিন্তু সরকার ৩১ জুলাই পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ রেখেছে। ফলে শ্রমিকরা ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা করেছেন। তাই এখন তারা করোনার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আমরা কেন এখন শ্রমিকদের দায়িত্ব নেব?
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনায় সর্বোচ্চ ৩০-৪০ ভাগ শ্রমিক দিয়ে কারখানা চালু করা উচিত ছিল। পোশাক খাতের নেতারা বলেছিলেন, তারা কারখানার আশপাশে বসবাস করা শ্রমিকদের নিয়ে কারখানা চালু করবেন। কিন্তু তারা সে কথা রাখেননি। বরং পোশাক মালিকরা গ্রামে থাকা শ্রমিকদের ১ আগস্ট থেকে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছেন।
তিনি বলেন, অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারের উচিত শিফট অনুযায়ী অল্প শ্রমিক দিয়ে কারখানা চালু রাখা। কারখানায় যত কম ভিড় হবে ততই সবাই নিরাপদ থাকবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারখানাগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখছি। কোনো শ্রমিকের করোনার লক্ষণ দেখা দিলে আলাদা করে দিচ্ছি। দ্রুতই তাকে ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি না, দেবো না। কারণ আমাদের শ্রমিকদের সংখ্যা অনেক বেশি।
বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে এহসান শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেউ আক্রান্ত হলে তাদের জন্য আলাদা আইসোলেশন কেন্দ্র রয়েছে। আমরা সেখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।