[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে পরিদর্শক লিয়াকত আলী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তিনি এ সাক্ষ্য দেন। এ সময় হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে অভিযুক্ত ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তিনি। এর আগে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শারমিন শাহরিয়া নিহত সিনহার বড় বোন।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, ‘সোমবার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসসহ পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সাক্ষ্য দিয়েছেন কেবল মামলার বাদী। ২৪ ও ২৫ আগস্ট আরও দুই দিন সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে। এ সময় আরও ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে।’

পিপি ফরিদুল আলম আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরে মামলার বাদী আদালতকে বলেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে এবং বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত।’

এদিকে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, তিনি ন্যায়বিচার আশা করেন। আদালতের কাছে তিনি সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ১৫ জন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ মামলার ১৫ জন আসামি। জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আইনজীবী হিসেবে ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি মোজাফফর আহমদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমদ।

প্রথম দফায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে সাক্ষ্য গ্রহণ। মধ্যখানে এক ঘণ্টা বিরতির পর বেলা সাড়ে তিনটায় আবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি ঘোষণা হয়। এ সময় ১২ আসামির পক্ষের নিযুক্ত ৯ জন আইনজীবী মামলার বাদীকে ঘটনার নানা ইস্যুতে জেরা করেন। সময়ের অভাবে মামলার অপর তিন আসামি ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এএসআই লিটন মিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা মামলার বাদীকে জেরা করতে পারেননি।

ওসি প্রদীপের পক্ষে আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত সাংবাদিকদের জানান, সময়ের অভাবে মামলার বাদীকে জেরা করতে পারেননি তিনি। মঙ্গলবার সকালে জেরার সময় নির্ধারিত হয়েছে।

এর আগে সকাল সোয়া নয়টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। তাঁরা হলেন পুলিশের ৯ সদস্য ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

উল্লেখ্য, গেল বছরের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি এবং নিহত মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

পরে গেল বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।

গ্রেপ্তারকৃত আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এছাড়া এ মামলার মোট সাক্ষী ৮৩ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *