[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। জাতি আজ পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে খ্যাত প্রিয় কবিকে।

তিনি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে দেওয়া হয় একুশে পদক।

নজরুলের চেতনা ও আদর্শ বাঙালির জীবনে চিরন্তন, বাংলাদেশের উত্থান-পতনময় সংগ্রামী ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। নির্মম দারিদ্র্য থেকে অসামান্য প্রতিভায় তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন মহাপুরুষের আসনে। আজীবন সংগ্রাম করেছেন শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য। সোচ্চার ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে। তরুণদের কাছে তিনি বিদ্রোহের অনন্ত প্রতীক।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচি

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। কর্মসূচি অনুযায়ী, দিনের শুরুতে বাদ ফজর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কুরআন খানি অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সোয়া ৭টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন জাতীয় অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

বাংলা একাডেমির কর্মসূচি
শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমি পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বিকেল ৪টায় অনলাইনে নজরুল বিষয়ক আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তি পরিবেশন করবেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করবেন শিল্পী সালাউদ্দিন আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

এছাড়াও জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *