[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]

নাম বক্তার আহম্মদ। বাবা আবুল খায়ের। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রায় ২১ শতাংশ জমি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের মধ্যে পড়ে যায়। স্বাভাবিক নিয়মে সরকারের পক্ষ থেকে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ সাড়ে ৪৫ লাখ টাকা পাওনা হয় তার। এ টাকাই একপর্যায়ে বক্তার আহম্মদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। টাকা হাতিয়ে নিতে ‘আয়নাবাজির’ মতো কৌশল গ্রহণ করে একটি চক্র।

ক্ষতিপূরণের ওই টাকা হাতিয়ে নিতে ‘বক্তার আহম্মদ’ নামের অপর এক জালিয়াত নির্বাচন অফিসের এক কর্মকর্তা ও ভূমি সার্ভেয়ারের সহায়তায় মাস্টার প্লান তৈরি করে। জালিয়াত বক্তার আলী তার বাবার নাম ‘পেটান আলী’ পরিবর্তন করে আবুল খায়ের দেখিয়ে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।

ভুয়া বক্তার আহম্মদ ওয়ারিশের মিথ্যা কাগজপত্রও তৈরি করেন। সেগুলো কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার অনুমোদনও নিয়ে নেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি।

অভিনব এমন কৌশলে টাকা তুলে নেওয়ার আগেই বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। অভিযোগ জমা হয় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অনিয়মের এ কাজে সরাসরি সহায়তাকারী হিসেবে কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার সুভ্রতের নাম আসে।

অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম-২ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়।

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। তিনি বলেন,‘উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জনৈক ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে পিতার নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে রেললাইন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের সুযোগ দেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। উপজেলা নির্বাচন অফিসে অভিযানকালে দুদক টিম উপজেলা নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের এলএ শাখা থেকে অভিযোগ সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাপ্ত নথিপত্র প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাইকালে প্রায় ৮০ বছর আগের দলিলপত্রও পাওয়া যায়। সত্য উদঘাটনের জন্য তা যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরির পর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে।’

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা দুই থেকে তিন লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে বক্তার আহম্মদের বাবার নাম ‘পেটান আলী’ পরিবর্তন করে আবুল খায়ের যুক্ত করে একটি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেন।

সেই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বক্তার আহম্মদ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার সুভ্রতকে দুই লাখ টাকা ঘুষ ও বিপুল অঙ্কের অর্থের কমিশনের বিনিময়ে ২১ শতাংশ জমির ক্ষতিপূরণের ৪৫ লাখ ৫১ হাজার ৮০৪ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন।

প্রকৃত বক্তার আহম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৭ বছর চাকরি করে ১৯৯৬ সালে অবসরে যান। বর্তমানে ভোটার তালিকায় বক্তার আহম্মদের বাবার নাম আবুল খায়ের উল্লেখ আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *