[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:-কুমিল্লা প্রতিনিধি]

রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে গাছের চারা বিক্রি ও টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া কুমিল্লার তাজগীর হোসেনের ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন।

রোববার (১০ এপ্রিল) কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ভর্তির জন্য ২৫ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেছেন তাজগীর হোসেনকে। এ সময় উপস্থিত ছিল লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম সাইফুল আলম।

জেলা প্রশাসক বলেন, তাজগীরের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে অবগত করেছে। ছেলেটি অদম্য মেধাবী। তারপর ইউএনওকে বলেছি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিয়ে আসতে। প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ টাকা দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দরিদ্র তহবিলে দরখাস্ত করা হলে তাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

খুলনা সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া তাজগীর হোসেন বলেন, ভর্তি নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। ভেবেছি স্বপ্ন যাত্রা এখানে থেমে যাবে। আমাকে আর্থিক সহযোগিতা ও মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। জেলা প্রশাসক মহোদয় অনেক আন্তরিক। তিনি বলেছেন খুলনা প্রশাসনকেও বলে দেবে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য।

তিনি আরও জানান, যখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি, তখন আমার মা মারা যান। মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে চিকিৎসক বানাবেন। মা বলতেন ভিক্ষা করে হলেও পড়াবেন। এখন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। মা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। আমরা দুই ভাই নানার বাড়িতে থাকি। অর্থাভাবে ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া বন্ধ। অপর দুই ভাইকে নিয়ে বাবা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের কইয়া গ্রামে থাকেন। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না। নানার বাড়িতে থাকলেও মামাদের আর্থিক অবস্থা করুণ। মামারা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। স্কুল জীবনে বাড়ির পাশে মায়ের দোয়া নার্সারিতে কাজ শুরু করি। চারা রোপণ, পরিচর্যা এবং ভ্যানে করে চারা বিক্রি সবই করেছি। কলেজে ভর্তির পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করেছি। সে অর্থ নিয়ে চালিয়েছি নিজের পড়ালেখার খরচ।

তাজগীর হোসেনের সহপাঠী ও বন্ধু মাসুম অনিক বলেন, বন্ধুর এ সাফল্যে আমি ভীষণ গর্ববোধ করছি। কলেজ জীবনে তার সঙ্গে পুরোটা সময় কাটিয়েছি। নিজের চোখে দেখেছি তার পরিশ্রম ও না হারার দৃঢ় সংকল্প ।

প্রসঙ্গত, তাজগীর হোসেন লাকসাম উপজেলার বরইগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫, জ্যোতিঃপাল মহাথের বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড, একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৯৪ এবং লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *