[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- মাহফুজ বাবু কুমিল্লা]

সবে মাত্র গাছগুলোতে ফলন আসতে শুরু করেছে। গাছের প্রতিটি ডোগায় ঝুলে আছে চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া ও লাউ। ধারদেনা করে অন্যের কাছ থেকে লাগিতে (বর্গা বা বন্ধক) নেয়া ৪০ শতাংশ ভুমির সহস্রাধীক গাছের একটিও আর নেই। সবগুলো গাছ কাঁচি দিয়ে গোড়া থেকে কেটে দেয়া হয়েছে সোমবার ভোর রাতে। গতকাল বিকেলেও তরতাজা ফসলের গাছের পরিচর্যা করে গেছেন কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের ঢাকলাপাড়া খন্দকার বাড়ি এলাকার দরিদ্র কৃষক নজির মিয়া (৫০)। সোমবার সকালে ক্ষেতে এসে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে শুধু আহাজারি করছেন ছোট ছোট লাউ কুমড়া আর মৃত গাছগুলো হাতে নিয়ে। আশেপাশে জড়ো হয়ে আছে এলাকার প্রতিবেশী ও কৃষকরা। এমন জঘন্য ঘটনায় নির্বাক ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিতে প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে অভিযুক্তের পিতা, ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকালাপড়া গ্রামের প্রতিবেশী জয়নাল মেম্বারের ভাতিজা আজিজ মাল এর ছেলে মনিরের সাথে লাউ ক্ষেতের নিচ থেকে ঘাস কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় বর্গাচাষী নজির মিয়ার। রবিবার সকালে ঘাস কাটার সময় কয়েকটি লাউ গাছের ক্ষতি করায় মনিরকে ক্ষেতের ভেতর থেকে ঘাস কাটতে নিষেধ করায় এ কথা কাটাকাটি হয়। সেসময় নজির মিয়াকে মারতে আসে অভিযুক্ত মনির। পরে কথা কাটাকাটির সময় নজির কে এ এলাকায় কৃষি কাজ করতে দেবে না বলে হুমকি দেয় অভিযুক্ত মনির। বিষয়টি নজির মিয়া ক্ষেতের মালিক সহ কয়েকজনকে জানালে তারা পরে সমাধান করবেন এবং ঝগড়াঝাটি করতে নিষেধ করেন তারা। পরদিন সোমবার (১১এপ্রিল) সকাল ৯টায় ক্ষেতে আগাছা পরিস্কার করতে এসে নজির মিয়া দেখেন ২০শতাংশ জমির চাল কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়ার সবগুলো গাছের গোড়া কাচি দিয়ে কেটে দেয়া হয়েছে।


কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে থাকেন। আশেপাশে প্রতিবেশিরা কান্না শুনে ছুটে এসে দেখতে পান মনিরের ঘরের একেবারে নিকটের তিনটি ক্ষেতের প্রায় ৪০শতাংশ জমির সবগুলো গাছ গোড়া দিয়ে কেটে দেয়া হয়েছে। গাছের পাতাগুলো রোদে নুয়ে পরেছে। প্রতিটি গাছের ডগায় ঝুলে থাকা ছোট ছোট লাউ কুমড়াগুলো ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন আর আহাজারি করছেন নজির মিয়া ও তার স্ত্রী। নজির মিয়া জানান তিনটি ক্ষেত থেকে লক্ষাধিক টাকার সবজি বিক্রি করতে পারতেন আর কদিন পরই। ধারদেনা ও কিস্তিতে টাকা নিয়ে অন্যদের জমি চাষাবাদ করেই সংসার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জমির মুল মালিকদের কয়েকজন এবং এলাকাবাসীও একই কথা বলেন।
এদিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা অভিযুক্ত মনির দ্রুত সেখান থেকে সটকে পরেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জমির পাশের বাড়ির জনৈক নারী মনির কে সেহেরির পর চালকুমড়া ক্ষেতের মাচার কাছে ঘুরাঘুরি করতে দেখেছেন বলে স্বীকার করেন। তবে গাছ কেটেছে কিনা তা তিনি বলতে পারেন না বলে জানান।

অমানবিক এ ঘটনায় অভিযুক্ত মনিরের পিতা আজিজ মাল প্রতিবেদককে জানান, মনির কালাকচুয়া মায়ামি রেষ্টুরেন্টে চাকরি করেন। গতকাল ঘাস কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে তার দাবি মনির এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। অন্য কেউ এটা করে থাকতে পারে। তবে ঘটনাটি অমানবিক জানিয়ে তিনিও বিষয়টির উপযুক্ত বিচার করবেন বলেও জানান।

উপস্থীত ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বলেন, গাছের সাথে এ কেমন বর্বরতা। শত্রুতা থাকলে কৃষকের সাথে থাকতে পারে তাই বলে এমন সুন্দর তরতাজা সবজির গাছ কেন কাটবে? গাছের কি অপরাধ?

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। তবে এখনো কেউ এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি। তবুও এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *