[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- নিজস্ব প্রতিবেদক]
জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সহকর্মী সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম এর মা বাবা ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সুবিচারের আশ্বাস, শান্তনা ও ঈদ উপহার নিয়ে ব্রাহ্মণপাড়ার অলুয়ায় নাঈমের গ্রামের বাড়িতে। ২মে সোমবার সকাল ১১টায় জেলা পুলিশ সুপার এর পক্ষ ঈদ উপহার নিয়ে সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম এর বাড়িতে হাজির হন তিনি।
এসময় নাঈমের অসুস্থ পিতা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোশাররফ হোসেনের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন এবং নাঈমের মা কে শান্তনা প্রদান করে সুবিচার নিশ্চিতের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। পরে জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ (পিপিএম) এর পক্ষ থেকে নাঈম এর বাবা মায়ের হাতে ঈদ মোবারক তুলে দেন। এসময় তিনি বলেন, “পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বুড়িচংয়ের রাজাপুর ইউপি’র হায়দ্রাবাদ এলাকায় সীমান্তের মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সাংবাদিক নাঈম হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী রাজু ইতিমধ্যেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এঘটনায় জড়িত আরো ৪আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলকে গ্রেফতারে কাজ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না”
এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বুড়িচং থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শরিফ রহমান, উপ-পরিদর্শক (ডিএসবি) নকুল কুমার সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল রাত আনুমানিক পৌনে ১০টায় মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে।
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে গুলিতে নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন ওরফে নাঈম সরকারের (২৮) খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়ে সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সচেতন নাগরিকগণ।
ঘটনার পরপরই নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকরির চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন। পুলিশ ও র্যাবকে তথ্য দিয়ে মাদকদ্রব্য জব্দ করতে সহায়তা করায় এবং মাদক ব্যবসা নিয়ে প্রতিবেদন করায় মাদক ব্যবসায়ীরা মহিউদ্দিনের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। এ কারণেই মাদক ব্যবসায়ীরা গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে বুড়িচং উপজেলার শংকুচাইলসংলগ্ন হায়দ্রাবাদ নগর এলাকায় মহিউদ্দিনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
মহিউদ্দিন ওরফে নাঈম সরকার কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে। তিনি অনলাইন পোর্টাল বাংলাদেশ রয়টার্স, খবর প্লাস বিডি এবং কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কুমিল্লার ডাক পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন আনন্দ টেলিভিশনের ব্রাহ্মণপাড়া-বুড়িচং প্রতিনিধি ছিলেন। ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গ্রামের বাড়িতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মহিউদ্দিন দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে বড় ছিলেন। ছোট ভাই হৃদয় সরকার সৌদি আরবে থাকেন। একমাত্র বোন শারমিন আক্তারকে কুমিল্লা শহরে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। তাঁর বাবা মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ পুলিশে দীর্ঘ ৩৪ বছর চাকরি শেষে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান। তিনি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক ছিলেন।
ছেলে মহিউদ্দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব সময় তিনি তাঁর ছেলেকে ন্যায়ের পথে থাকার কথা বলেছেন এবং ভালো কাজ করা শিখিয়েছেন। তাঁর ছেলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গুলিতে মারা গেছেন। তিনি তাঁর ছেলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিনের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মী সাংবাদিক মাহফুজ বাবু বলেন, মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন। সব সময় মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করেছে। প্রশাসনকে সহায়তা করতো, এসব কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলো। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তিনি।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, সাংবাদিক মহিউদ্দিন বেশ কয়েকবার পুলিশকে তথ্য দিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইল এলাকার মাদক ব্যবসায়ী রাজু মিয়ার বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করতে সহায়তা করেছিলেন। এ নিয়ে রাজুর সঙ্গে মহিউদ্দিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। গত ২৬ মার্চ মহিউদ্দিন পেশাগত কাজে সংকুচাইল যান। ওই সময় সংকুচাইল বাজারে পুলিশ মহিউদ্দিনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় তিনি পুলিশকে বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীর মালামাল না আটকে আমাকে আটকালেন কেন।’ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাদক ব্যবসায়ী রাজু এ কথা শুনে বাইক থামিয়ে মহিউদ্দিনের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁর বাকবিতণ্ডা ও একপর্যায়ে মাদক কারবারি রাজু পুলিশের সামনেই তাঁকে চড় মারে। পরে মহিউদ্দিন রাজুকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর মাদকদ্রব্য ধরিয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠেন। স্থানীয় দুই ব্যক্তি মহিউদ্দিনকে ওই দিন রাতে রাজুর মাদকের চালান পাচার হবে বলে জানান।
সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকারের বন্ধু বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে মহিউদ্দিন সরকার নাঈমকে ভারতীয় সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইলসংলগ্ন হায়দ্রাবাদ এলাকায় ডেকে নেন জনৈক সোর্স । এরপর মহিউদ্দিন রাতে সেখানে যান। যাওয়ার আগেই বুড়িচং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এর সাথে কয়েকবার কথাও বলেন। সোর্স সুজন সহ মহিউদ্দিনের সাথে থাকা দুজ তাকে নগর সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি নিয়ে যায়। সীমান্তের কাছাকাছি একটি দোকান ও বিজিবি চৌকির কাছে গেলে সেখানে মাদক কারবারি রাজুর নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল উপস্থিত হয়। মাদক কারবারি মো. রাজু, এমরান, জুয়েল, খলিল, ওহিদ, মহসিন সহ ২০/২৫ জনের একটি দল হাজির হয়। মহিউদ্দিনের সাথে থাকা ফরহাদ মৃধা মনি ও পলাশের বক্তব্য মতে, দলবল ও আগ্নেঅস্ত্র দেখে ঘাবড়ে যায় তারা। পিস্তল রাজু ও জুয়েল দুটো পিস্তল বের কর