[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- কুমিল্লা প্রতিনিধি।।]

‘জীবনে কোন কিছু পাওয়ার জন্য সাংবাদিকতা করিনি। সব সময় চেষ্টা করেছি দেশের এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। সম্মাননা পাওয়ার কথা কখনো মাথায় আসেনি। আর কখনো ভাবিনি এমন একটি বিশাল আয়োজনে আমার মতো ক্ষুদ্র একজন সাংবাদিককে সম্মাননা জানানো হবে। আমি বলবো এটি বসুন্ধরা গ্রুপের একটি বিরল দৃষ্টান্ত, এটা তাঁদের উদারতা। তাঁরা বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এক সঙ্গে দেশের ৬৪ জেলার ৬৪ জন গুণী সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করার ঘটনা অতীতে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। আমার মনে হয় এটাই প্রথম ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা।’

ছবি: কুমিল্লার জেষ্ঠ্য সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল।


কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার জেষ্ঠ্য সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল। সোমবার (৩০ মে) রাতে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) কুমিল্লার এই গুণী সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করেছেন দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। একই সঙ্গে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে দেশের আরও ৬৩ জেলার ৬৩ জন গুণী সাংবাদিককে। আইসিসিবিতে ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ এর আয়োজনে ৫টি ক্যাটাগরিতে ১১ জন অসুসন্ধানী সাংবাদিককে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় দেশের প্রতিটি জেলা থেকে একজন করে গুণী সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে কুমিল্লার জেষ্ঠ্য সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুলকে সন্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকা প্রদান ছাড়াও উত্তরীয় পরিয়ে দেন অতিথিরা।
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম ও ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’-এর জুরি বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান।
এমন সন্মাননা পেয়ে জেষ্ঠ্য সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল বলেন, আমার জন্য এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা। কখনো ভাবিনি জীবনে এমন মূহুর্ত আসবে। এই ভালো লাগার কথা ভাষায় প্রকাশ করে শেষ করতে পারবো না। বসুন্ধরা গ্রুপের এমন সম্মাননা দেশের জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের ভালো কাজে আরও অনুপ্রাণিত করবে। এমন আয়োজনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক।
জেষ্ঠ্য সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক চিত্রালীতে সংবাদ পাঠানোর মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি নেন। বলতে গেলে সেখানে তিনি শৌখিনভাবে সংবাদ পাঠাতেন। শিক্ষা সনদ অনুযায়ী তাঁর মূলনাম আবুল হাসানাত। জন্ম ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর। ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক রূপসী বাংলায় সাংবাদিকতা করাকালীন পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওহাব মূলনাম আবুল হাসানাতের সঙ্গে ডাকনাম বাবুল যোগ করে দিলে পরিচিত হন আবুল হাসানাত বাবুল নামে। তখন গল্প, কবিতা প্রচুর লিখতেন। ফলে সাংবাদিকার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চাও ব্যাপক হয় তাঁর। একই বছর অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক আমোদ-এর টেবিলে বসে কাজ করার সুযোগ পান। সেই থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত আমোদ-এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। আমোদ-এ সম্পাদকীয়, উপ-সম্পদকীয় নিয়মিত লিখতেন। একই সময়ে জেলা পরিষদের মুখপত্র লালমাইয়ে সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমানের পক্ষে সাময়িকীটির সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালের ১০ ডিসেম্বর রূপসী বাংলা দৈনিক হলে রূপসী বাংলার প্রধান সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক আবদুল ওহাব তাকে সিটি এডিটরের দায়িত্ব দেন। তখন থেকে মাসিক সম্মানি পেতেন। এই সম্মানি ১৫০ টাকা প্রথমে থাকলেও পরবর্তীতে ২৫০০ টাকা পরিণত হয়। কুমিল্লার একমাত্র দৈনিকে তখন রাতদিন কাজ করতে হতো তাকে। ৭০ ও ৮০ দশকে অবৈতুনিক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন দৈনিক আজাদ, দৈনিক দেশ বাংলা, দৈনিক বাংলার মুখে। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র পান চট্টগ্রামের দৈনিক মিছিল থেকে । এই নিয়োগ পেয়ে সাংবাদিক সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৭৬-৭৭ সালে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ছিলেন কুমিল্লার প্রয়াত সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলী হোসেন চৌধুরী। এই সময়কালে ক্রীড়াজগত ও নাট্য সাময়িকী থিয়েটারে কুমিল্লার প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। সাংবাদিক সমিতির একাধিক জাতীয় সম্মেলনে কুমিল্লার প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯১ সালে প্রেসক্লাবের সদস্য পদ পান। ১৯৯৯ সালে প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বরে সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে কুমিল্লার প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৭০-৮০ দশকে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইনকিলাব, বাংলার বাণীতে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিবেদন লিখতেন। আমোদ-রূপসী বাংলায় বিভিন্ন নামে নিয়মিত কলাম লিখতেন। ১৯৯৩ সালে অভিবাদন নামের সংবাদপত্র প্রকাশ করে সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ২০২২ সালে অভিবাদনের বয়স ২৮ বছর হলো। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির জাতীয় পুরস্কার পাবার পর বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি তাকে সম্মাননা প্রদান করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *