[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- কুমিল্লা প্রতিনিধি]
ডাকাত পরিচয়ে এক হাজার চারশত টাকার জন্য তিন ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করেন মো বাবুসহ তার পাঁচ সহযোগী,মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হয়ে ও ১৭ বছর ধরে পলাতক থাকার পর অশেষে মোঃ বাবু র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।
রবিবার (২৮আগস্ট) রাতে কুমিল্লা নগরীর আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন র্যাব-১১। মো.বাবু কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার শ্রায়াং গ্রামের সেলিম রেজার ছেলে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ সাংবাদিকদের জানান ২০০৭ সালের ০৬ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং বাজারে ০১ হাজার ৪০০ টাকা ডাকাতি করার জন্য তিন ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনাটি আসামীকে ধরতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিয়ে র্যাব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলো।
গোপন তথ্য ভিত্তিতে বরিবার নগরীর আলেখারচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ট্রিপল মার্ডার মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত
আসামী মোঃ নেওয়াজ শরীফ রাসেল @ সবুজ @ বাবু (৩৭)’কে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলেন, আজ থেকে প্রায় ১৭ (সতের) বছর পূর্বে ০৬ জানুয়ারি ২০০৭সালে
রোজ শনিবার প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার একটি রাতে গ্রেফতারকৃত আসামী শরীফ রাসেল @ সবুজ @ বাবু সহ আরোক য়েকজন ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং এলাকার বদির পুকুর পাড় সংলগ্ন একটি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলো।
এমন সময় লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং বাজারের দোকান বন্ধ করে কাচামাল ব্যবসায়ী মনোহরগঞ্জ উপজেলারপ্রতাপপুর গ্রামের মনিন্দ দেবনাথ’র ছেলে উত্তম দেবনাথ ও পরীক্ষিত দেবনাথ এবং পান ব্যবসায়ী লাকসাম উপজেলার জগৎপুর গ্রামের সামছুল হকের ছেলে বাচ্চু মিয়া বাড়ি ফিরছিলেন। তারা বদির পুকুর পাড় এলাকায় এসে পৌঁছালে আকস্মিকভাবে জঙ্গল থেকে আসামী রাসেল @ সবুজ @ বাবু ও তার সহযোগীরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং যার যা কিছু আছে সব কিছু দিয়েদেওয়ার জন্য তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ভিকটিমরা তাদের টাকা-পয়সা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামী রাসেল @ সবুজ @ বাবু সহ তার সহযোগীরা ভিকটিমদেরকে অনবরত কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে।
একপর্যায়ে ভিকটিমরা তাদের সাথে থাকা টাকা-পয়সা বাধ্য হয়ে আসামীদের দিয়ে দেয়।
হঠাৎ ভিকটিম উত্তম দেবনাথ আসামীরাসেল ও তার সহযোগীদের চিনতে পেরেছে এবং পরেরদিন স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নিকট তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে মর্মে চিৎকার করে উঠে।
যেহেতু ভিকটিমরা আসামীদের চিনে ফেলেছে তাই আসামী রাসেল ও তার সহযোগীরা ভিকটিমদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিমদেরকে পার্শ্ববর্তী একটি মাঠে নিয়ে চাপাতি ও ছোরা দিয়ে গলা কেটে নিমর্মভাবে হত্যা করে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ঘটনার পরেরদিন সকালে রাসেল ও তার পরিবার কুমিল্লা জেলা ত্যাগ করে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন ডগরমুরা এলাকায় তার পিতার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়এবং পরবর্তীতে স্ব-পরিবারে সেখানে ভাড়াবাসায় বসবাস শুরু করে। নিজের আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য আসামী রাসেল
ডগরমুরা এলাকায় পরিচিতি লাভ করে সবুজ নামে। এই এলাকায় তিন থেকে চার বছর অর্থাৎ ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত
হকার ব্যবসা করে খুব নিরাপত্তার সাথে বসবাস করে আসছিল। ২০১০ সালের শেষের দিকে তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের একটি
পরিবারের ডগরমুরা এলাকায় যাতায়াত পরিলক্ষিত হলে তারা সাভার নবীনগর থানাধীন নিরিবিলি এলাকায় নতুন বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে অধিক অর্থউপার্জনের জন্য হকারী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে সড়কে পলাশ ও নিরাপদ পরিবহণে হেল্পারের কাজ করা শুরু করে। ২০১৬ সালে তার
স্ত্রী তার আসল পরিচয় ও মামলার বিষয়টি জানতে পেরে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে। তাই ভয়ে আসামী রাসেল সাভার
এলাকা ত্যাগ করে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর
তার পরিবার সাভার এলাকা ত্যাগ করে কুমিল্লা জেলার বরুড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। বরুড়া এলাকায়
বসবাসকালীন তার মা গোপনে লাকসাম এলাকায় বিভিন্ন সময়ে যাতায়াত করে এবং বুঝতে পারে ২০০৭ সালের হত্যাকান্ডের
বিষয়টি এলাকায় তেমন কোন আলোচনা নেই তাই আসামী রাসেল ২০২০ সাল থেকে বরুড়ায় তার মায়ের সাথে ভাড়াবাসায়
বসবাস শুরু করে। আসামী রাসেল মূলতঃ বরুড়ায় তার বাড়ির আশেপাশে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসাবে কাজ শুরু করে। ০১ বছর
অতিক্রম হয়ে গেলে পদ্মা পরিবহণে হেল্পারের কাজ শুরু করে। ২০২২ সালে আসামী বোগদাদ পরিবহণে হেল্পারের কাজ শুরু করে।
এ ঘটনায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা বাকীরা হলেন লাকসামের আব্দুল কাদের এর ছেলে আব্দুর রহমান,
ইয়াকুব আলীর ছেলে শহীদুল্লাহ, আব্দুল মান্নানের ছেলে ফারুক হোসেন ও মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে স্বপন।
বিগত ১৪ নভেম্বর ২০১৮সালে কুমিল্লার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের আদালতের
বিচারক নুর নাহার বেগম শিউলী আলোচিত ও নিমর্ম হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ০৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করেন।
উল্লেখ্য এ ঘটনায় ভিকটিম বাচ্চু মিয়ার ভাই কবির হোসেন ০৭ জানুয়ারি ২০০৭ ইং তারিখে বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানায় খুন সহ ডাকাতি মর্মে একটি মামলা দায়ের করেন।