[ ম্যাক নিউজ ডেস্ক ]

চট্টগ্রামে ছয়তলা বাড়ি, কক্সবাজারে প্লটসহ জমি ও দুটি বাসের মালিক ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসী আকতার।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের ছয়তলা বাড়ি। কক্সবাজার সদরে প্লটসহ কোটি টাকার জমি। রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী দুটি বাসও।

এসব সম্পত্তির মালিক ফেরদৌসী আকতার নামের এক গৃহিণী। তাঁর স্বামী মো. শাহজাহান শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামের পরিদর্শক। এর আগে তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

ঢাকায় ওসির আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, স্বামী পুলিশ কর্মকর্তার ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে এসব সম্পদের মালিক হন স্ত্রী ফেরদৌসী আকতার। তাঁর ৩ কোটি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া ফেরদৌসী নিজেকে মৎস্য ও পোলট্রি খামারি দাবি করলেও এগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

মামলা হওয়ার পর আসামিরা ঘুষের টাকায় অর্জিত এসব সম্পদ হস্তান্তর কিংবা স্থানান্তর করতে পারেন। এ জন্য দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয় ক্রোকের জন্য। ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন নেসা সম্পদগুলো ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন।
মাহমুদুল হক, দুদকের আইনজীবী

লাখ ৩১ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২০১৬ সালে কেনা ঝিলংজা মৌজায় ২০ শতক জমি রয়েছে তাঁর নামে, যার মূল্য ১ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। একই মৌজায় ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকায় ২ শতক জঙ্গলবেষ্টিত জমি কেনেন ফেরদৌসী।

বাড়ি–জমির পাশাপাশি দুটি যাত্রীবাহী বাসের মালিকও ফেরদৌসী। এগুলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডে চলাচল করে। ২০১৪ সালে ফেরদৌসী ১০ লাখ টাকায় এই দুটি বাস কেনেন বলে জানায় দুদক।

অস্তিত্বহীন পোলট্রি ও মৎস্য খামারে ‘আয়’
দুদক জানায়, ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৯-২০ কর অর্থবছর পর্যন্ত ১৩ বছরে ফেরদৌসী আকতার পোলট্রি ও মৎস্য খামার থেকে আয় দেখান ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ব্যবসা–সম্পর্কিত ট্রেড লাইসেন্স ব্যতীত অন্য কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।

সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, মৎস্য ও পোলট্রি খামারে বৈদ্যুতিক মিটার সংযোগ থেকে শুরু করে যাবতীয় কাগজপত্র, পরিবেশের ছাড়পত্র, খামারের লেনদেনসংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব, মালামাল কেনাবেচার বিল–ভাউচারসংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

এ বিষয়ে ফেরদৌসী আকতারের বক্তব্য জানতে ১১ সেপ্টেম্বর বাসায় গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে তাঁর স্বামী পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহজাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, পোলট্রি ও মৎস্য ব্যবসা রয়েছে স্ত্রীর।

তাঁর স্ত্রীর আত্মীয়স্বজন দেশের বাইরে থাকেন। তাঁরা টাকা পাঠিয়েছেন। সেই টাকায় স্ত্রী এসব করেছেন। এ ছাড়া বেতন থেকে কিছু টাকা তিনি স্ত্রীকে দিতেন।

তবে পোলট্রি ও মৎস্য খামারের অবস্থান কোথায় তা জানাতে পারেননি তিনি। এখন দুদকের মামলা আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শাহজাহানের ঘুষের টাকা বৈধ করতে স্ত্রীকে মৎস্য ও পোলট্রি ব্যবসায়ী সাজালেও এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।

দুর্নীতিবাজেরা স্ত্রীদের পোলট্রি ও মৎস্য ব্যবসায়ী সাজিয়ে অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার চেষ্টা করেন বলে মন্তব্য করেন সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এসব দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সম্পদগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এটি থেকে শিক্ষা নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে অন্যরা ঘুষ–দুর্নীতিতে জড়িয়ে না পড়েন। না হলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *