[ম্যাক নিউজ ডেস্ক রিপোর্টঃ-আবদুর রহমান কুমিল্লা প্রতিনিধি।।]
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে কৃষক অজি উল্লাহকে (৬০) হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলা দিনে অবশেষে মুখ খুলেছেন ওই মামলার প্রধান আসামি মো.মহিন উদ্দীন চৌধুরী। মহিন উদ্দীন উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। এছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছেন তিনি।
ঘটনার ৮ মাসের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার লক্ষণপুর বাজারে অবস্থিত ইউপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। চেয়ারম্যান দাবি করেন,
তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনের প্ররোচণায় ওই সময় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি করা হয়েছিলো। প্ররোচিত না হয়ে পুলিশ সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে তিনিসহ আসামিরা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন বলে দাবি করেন।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে অজি উল্লাহর মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সাংবাদিকদের দেখিয়ে চেয়ারম্যান বলেন- সুরতহালের মতো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও মৃত অজি উল্লাহর শরীরে আঘাতের কোন অস্তিত্ব নেই। অজি উল্লাহর মৃত্যু স্টোক বা স্বাভাবিক কারণেই হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
কৃষক অজি উল্লাহ ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মড়হ গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে ছিলেন। অজি উল্লাহ প্রায় ৩০ বছর প্রবাসে ছিলেন। ঘটনার কয়েক বছর আগে দেশে এসে তিনি কৃষি কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন তিনি।
চলতি বছরের ৭ ফ্রেরুয়ারি দুপুরে বাড়ির সামনে রাস্তা নির্মাণের বিরোধকে কেন্দ্র করে অজি উল্লাহকে পিাটিয়ে হত্যা এবং তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের কথা উল্লেখ করে ওইদিন রাতেই থানায় চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন অজি উল্লাহর স্ত্রী শাহানারা বেগম মোবাশ্বেরা। মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপরের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান মো.মহিন উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ঘটনার দিন মড়হ বাজার থেকে গ্রামের পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত একটি রাস্তায় মাটি ফেলার কাজ চলছিলো। প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো রাস্তাটি পাকা হবে, এজন্য মাটি ফেলে এটি স¤প্রসারণ করা হচ্ছিল। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে ট্যাগ অফিসারসহ সেদিন সকালে রাস্তার কাজ পরিদর্শনে গেলে অজি উল্লার ছেলে মহসিন এসে আমাদেরকে বলে- তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা করা যাবে না। এটা তাদের সম্পত্তি। তখন আমি তাকে বলেছি, এটি ৪০ থেকে ৫০ বছরের পুরোনো রাস্তা এবং সরকারি কাজ- তুমি এভাবে বাধা দিতে পারো না। এনিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মহসিন আমাকে গালমন্দের এক পর্যায়ে হঠাৎ ঘুষি মারে। এতে আমি ও ট্যাগ অফিসার বিব্রত হয়ে আরেকটি কাজ পরিদর্শনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নারায়ণপুর গ্রামে চলে যাই। দুপুর আড়াইটা থেকে ৩ টার দিকে মড়হ গ্রামের এক লোক আমাকে কল দিয়ে জানায়- অজি উল্লাহ পাশের বাড়ির একটি ঘরে স্টোক করেছে। পরে আমি দ্রæত তাকে হাসপাতালে নিতে বলি। কেন এমন হলো, জানতে চাইলে কল করা ওই ব্যক্তি জানায়- আপনার গায়ে হাত তোলায় অজি উল্লাহ ও তার পরিবারকে এলাকার লোকজন ধমক দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বলেছে- তোমাদের বিরুদ্ধে সরকার বাদী মামলা হতে পারে এমন ঘটনার জন্য। এরপর অজি উল্লাহ ও তার পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। হয়তো মামলা ও পুলিশ আসবে এমন ভয়ে সে স্টোক করেছে।
মো.মহিন উদ্দীন চৌধুরী আরও বলেন, এরপর জানতে পেরেছি হাসপাতালে অজি উল্লার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সুরতহালের সময় দেখেতে তার শরীরে আঘাতের কোন দাগ নেই। যতদূর জেনেছি- তার পরিবারও ঘটনার পর আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়নি। তবে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন তাদেরকে বলেছে- তোমরা মামলা না করলে চেয়ারম্যান উল্টো তোমাদের বিরুদ্ধে সরকার বাদী মামলা করবে। এছাড়া অর্থ দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এক পর্যায়ে তাদেরকে দিয়ে সাজানো মামলাটি করাতে সফল হয়েছিলো তারা।
ঘটনার ৮ মাস পরে কেন সংবাদ সম্মেলন করছেন, জানতে চাইলে ওই চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন প্রতিবেদন পুলিশের কাছেও আছে এবং আমিও সংগ্রহ করেছি। সেখানে বলা হয়েছে অজি উল্লাহর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আমার দাবি- এখন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সব কিছু বের করা যায়। পুলিশ ঘটনার সময় আমার অবস্থান যাচাই, ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আদালতে প্রকৃত প্রতিবেদন দাখিল করুক। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি- যেহেতু এমন কোন ঘটনার সাথে আমি বা আমার লোকজন জড়িত ছিলাম না, তাই অবশ্যই আমরা আদালতের মাধ্যমে এই হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবো। এ হত্যা মামলায় জড়িয়ে আমাকে অনেক হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেওপ্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রকারীদের এমন ঘটনায় নিন্দা জানাই।
এ প্রসঙ্গে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনোহরগঞ্জ থানার এসআই ফখরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল আলম বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি আমাদের। তদন্ত শেষ হলে আমরা প্রকৃত ঘটনার প্রতিবেদনই আদালতে দাখিল করবো। কে দোষী আর নির্দোষ সেটা আদালতই নির্ধারণ করবেন।