[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]

ঢাকার মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে ওই এলাকার আরেকটি প্রতিষ্ঠানের অফিসে যাচ্ছিলেন তিন কর্মচারী। পথে পুলিশ পরিচয়ে তাঁদের প্রথমে রিকশা ও পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেওয়া হয় খিলগাঁও এলাকায়। তাঁদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা রেখে দুজনকে আরেকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেওয়া হয়। এ সময় হেরিটেজ অ্যাসেটস নামের প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বলা হয়, ‘তোরা পেছন দিকে তাকাবি না, তাকালে গুলি করে দেব।’

এই বিবরণ দিয়ে ১৭ অক্টোবর মতিঝিল থানায় মামলা করেন হেরিটেজ অ্যাসেটস কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান। এই মামলা তদন্ত করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তিন পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করেছে মতিঝিল থানা–পুলিশ। গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যরা হলেন মো. কামরুল ইসলাম (৩৫), রাফিজ খান (২৬) ও তুষার ইমরান (৩১)। তাঁরা তিনজনই কনস্টেবল। তাঁদের মধ্যে কামরুল পুলিশের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন অর্থসংক্রান্ত একটি মামলার জেরে আর রাফিজ ও তুষার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে নিয়োজিত ছিলেন।

মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাসেল হোসেন মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্য পরিচয় দিয়ে ১২ অক্টোবর মতিঝিল এলাকা থেকে তিনজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এই তিনজন জড়িত ছিলেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ঘটনায় তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে ২১ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের অনুমতিতে তাঁদের দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে।

ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে ৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা তিন পুলিশ কনস্টেবলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাঁদের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনই নিরপরাধ। পুলিশ সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।

মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা ও তদন্তে জড়িত দুজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১২ অক্টোবর বেলা ৩টার পর হেরিটেজ অ্যাসেটসের অফিস সহকারী সুমন মিয়াসহ তিন কর্মচারী মতিঝিলের ওই মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ লাখ টাকা নেন। বেরিয়ে টাকা নিয়ে রিকশায় করে তাঁদের অফিসের (মতিঝিল) দিকে রওনা হন। যখন তাঁদের রিকশা অফিসের কাছে আসে, তখন তিন–চার ব্যক্তি নিজেদের সিআইডি পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে তাঁদের পথ আটকান। কথা বলার মধ্যে একপর্যায়ে সুমন পালিয়ে যান। তখন হেরিটেজ অ্যাসেটসের অপর দুই কর্মচারী মোয়াজ্জেম ও হৃদয়কে রিকশায় করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের দিকে নিয়ে যান ওই ব্যক্তিরা। পরে তাঁদের সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। পরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে প্রথমে নেওয়া হয় কমলাপুরের টিটিপাড়া এলাকায়। পরে খিলগাঁও চৌরাস্তার মসজিদ এলাকায় নিয়ে মোয়াজ্জেম ও হৃদয়ের কাছে থাকা ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর মোয়াজ্জেম ও হৃদয়কে আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেন আসামিরা। এ সময় তাঁদের বলা হয়, ‘তোরা পেছন দিকে তাকাবি না, তাকালে গুলি করে দেব।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সিআইডি পরিচয়ে ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়ার পর মতিঝিল এলাকার প্রতিটি জায়গার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করা হয়। বিভিন্ন স্পটের প্রায় ৫০টি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। এই ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী হলেন কামরুল ইসলাম। তিনি আগে থেকে সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পরিদর্শক রাসেল হোসেন বলেন, কামরুলের বিরুদ্ধে অর্থসংক্রান্ত আরেকটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মূলত কামরুলের নেতৃত্বে তাঁর পূর্বপরিচিত কনস্টেবল রাফিজ খান ও তুষার ইমরান সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটান। সেটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *