[ম্যাক নিউজ রিপোর্টে:- বরুড়া (কুমিল্লা) সংবাদদাতা ||]
কুমিল্লায় বাবাকে আঘাতের শোধ নিতে পেট্রোল দিয়ে জেঠার বসতঘর ও গরুর ঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন মারুফ হোসেন(২১) নামের এক যুবক। আগুনে ঘর পুড়িয়ে দেওয়া মারুফ হোসেন সোনাইমুড়ী গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে। ভুক্তভোগী আব্দুল কাদের অভিযুক্ত মারুফের আপন জেঠা। বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের সোনাইমুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সোনাইমুড়ী গ্রামের মৃত ওহাব মিয়ার ৪ ছেলে। তাদের মধ্যে আব্দুল কাদের(৭০) সবার বড় এবং বাচ্চু মিয়া(৬০) সবার ছোট। মাঝখানের দুই ভাই বাড়ির পাশে আলাদা বাড়ি করে বসবাস করেন। বড় ভাই আব্দুল কাদের এবং সবার ছোটভাই বাচ্চু মিয়া একই বাড়িতে পাশাপাশি ঘরে বসত করেন। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় এসব বিষয়ে মামলা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বুধবার সকালে বড়ভাই আব্দুল কাদের এবং ছোটভাই বাচ্চু মিয়ার সাথে বাড়ির পাশের ধানি জমিতে পানি দেওয়া-নেওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরে আব্দুল কাদেরের মেজো ছেলে এ ঘটনা শুনতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়। দুপুরের দিকে বাচ্চু মিয়া স্থানীয় সোনাইমুড়ী বাজার থেকে বাড়ির পথে আসার সময় তার গতিরোধ করে আব্দুল কাদেরের ছেলে জহির। এসময় বাচ্চু মিয়াকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাকে আহত করে জহির। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। এ ঘটনা কানে যায় বাচ্চু মিয়ার ছেলে মারুফের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মারুফ তার ২-৩জন সঙ্গী নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসে দেখেন আব্দুল কাদের, তার ছেলে কেউ ঘরে নেই। ঘরে ছিলেন আব্দুল কাদেরের স্ত্রী। এসময় ক্ষিপ্ত মারুফ আব্দুল কাদেরের স্ত্রীকে ঘরে বন্দী করে সাথে আনা পেট্রোল ছুড়ে দেন পুরো ঘরে। পরে মারুফ এবং তার সঙ্গীরা আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘরেবন্দী আব্দুল কাদেরের স্ত্রী কোনোরকমে বের হয়ে জীবন রক্ষা করেন। আগুন লাগানোর সাথে সাথে আব্দুল কাদেরের বসতঘর, পাকঘর, একচালা গরুর ঘর, বসত ঘরে থাকা ফ্রিজ, আলমারি, গোলাভরা ধানসহ সকল আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়ে যায় মুহূর্তেই। পরে মারুফ এবং তার সঙ্গীরা আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে, ততক্ষণে জ্বলে ছাঁই হয়ে যায় আব্দুল কাদেরের সবকিছু। এ ঘটনার পর থেকে বাচ্চু মিয়ার পুরো পরিবার পলাতক রয়েছে। এদিন ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল কাদেরের কাউকেও পাওয়া যায়নি। উভয় পরিবারের কে কোথায় আছেন, কেউ তা বলতে পারেননি। তাই উভয়পক্ষের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান লিমন। তিনি বলেন, তাদের বহুদিন ধরে পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। বুধবার দুপুরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া গরু দুটোকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে স্থানীয় মেম্বারকে নির্দেশ দিয়েছি। যে ঘটনা ঘটেছে সেটি খুব দুঃখজনক।
বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।