[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- নিউজ ডেক্স]

প্রকৃতির মধ্যে কিছু ভেষজ গাছ আছে যা খেলে খুব সহজেই আমাদের বিভিন্ন রোগ নিরাময় হয়, এমন একটি ভেষজ গাছ শজনে। যার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গ।রোগ নিরাময়ে কার্যকরী অলৌকিক ভেষজ গাছ শজনে।

প্রকৃতির মধ্যে কিছু ভেষজ গাছ আছে যা খেলে খুব সহজেই আমাদের বিভিন্ন রোগ নিরাময় হয়, এমন একটি ভেষজ গাছ শজনে। যার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলিফেরা। শজনে আমাদের সকলের কাছে অতি পরিচিত সুস্বাদু একটি সবজি।

খ্রিষ্টের জন্মের ১৫০ বছর আগের ভারতীয় প্রাচীন ভেষজ লেখনীতে শজিনার ঔষধি গুণের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেই পুরাকাল থেকেই ভেষজ পন্ডিতগণ শজনে গাছের বিভিন্ন রকম গুণের কথা উল্লেখ করে আসছেন। শজিনার মূল, ছাল, ফুল, ফল, বীজ,পাতা সবকিছুতেই মহাঔষধি গুণ বিদ্যমান। এর প্রধান ঔষধি রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে,বিটা- সিটোস্টেরোল, এক্যালয়েডস-মোরিনাজিন। আর ফুলে আছে জীবাণুনাশক টিরিগোজপারমিন। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি,প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।

প্রায় চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় শজনে গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়। সম্প্রতি অনেক দেশেই বাণিজ্যিকভাবে শজনে চাষ হচ্ছে । চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়ে খুব দ্রুত আর দুই তিন বছরেই ফুল ও ফল দেয়। এর ফুল, পাতা, ডাঁটা সব কিছুই সুস্বাদু ও শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। শজনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে করে পূর্বের থেকেও বেশি স্বাস্থ্যকর।

শজনে গাছকে বিভিন্ন খাদ্য প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পুষ্টি বিজ্ঞানীরা শজনেকে অত্যাশ্চর্য বৃক্ষ বা অলৌকিক বলে অভিহিত করেছেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা শজনে পাতাকে বলে থাকেন, নিউট্রিশন্স সুপার ফুড এবং শজনে গাছকে বলে থাকেন মিরাক্কেল ট্রি। কারণ এর সমস্ত অংশ যেমন ডাঁটা, পাতা, বাকল, শিকড় ইত্যাদি জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং ভেষজ গুণাবলী।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এ গাছকে মায়েদের ‘উত্তম বন্ধু’ এবং পুষ্টির এক অনন্য সহজলভ্য উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বর্তমানে শজিনা গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন ফুল, পাতা, গাছের ছাল, বাকল, শিকড় ইত্যাদি প্রায় ২০০ প্রকার রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

প্রতি ১০০ গ্রাম সতেজ শজনে পাতায় পুষ্টি উপাদান থাকে : শক্তি ৬৪ ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৮.২৮ গ্রাম, প্রোটিন ৯.৪০ গ্রাম, ফ্যাট ১.৪০ গ্রাম, ফাইবার ২.০ গ্রাম, পানি ৭৮.৬৬ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) ০.২৫৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লেভিন) ০.৬৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) ২.২২০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৫, (প্যানটোথেনিক এসিড) ০.১২৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) ১.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৯ (ফলেট) ৪০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.৩৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৩৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৯ মিলিগ্রাম।

পুষ্টিগুণ বিবেচনায় শজনে পাতা আর শজনে ডাঁটা দুটোই মূল্যবান। এই দুই ধরনের খাবারের মধ্যেই কিছু বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে। আর তাই আপনার পছন্দমতো যে কোনো একটি খেতে পারেন। তবে শজনে ডাঁটার মধ্যে পাতার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার রয়েছে। শজনে পাতার মধ্যে ১৮ ধরনের এমিনো এসিড রয়েছে যা প্রোটিন গঠনের মূল উপাদান। প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হিসেবে পুষ্টিবিদরা শজনে পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন। জেনে নিন সুপার ফুড শজিনা পাতার অত্যাশ্চর্য সব উপকারিতা-

পুষ্টির পাওয়ার হাউজ

প্রতি গ্রাম শজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, ডিম থেকে প্রায় দুই গুণ বেশি প্রোটিন ও দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। আয়রনের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

শজনে পাতার এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম শজিনার পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আদর্শ শজনে পাতার চা। এই পাতার মধ্যে ফাইটোকেমিক্যাল নামের একটি যৌগ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই পাতার চা পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অক্সিডেটিভ চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে

সজনে পাতা রক্তস্বল্পতা দূর করে। শাকের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি আয়রন রয়েছে এতে। কলা থেকে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে শজনে পাতা দারুণ উপযোগী। তবে ভালো উপকার পেতে বেশ কিছুদিন নিয়মিত শজনে পাতা, ডাঁটা ও ফুল খাওয়া দরকার।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খনি

শজনে পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা হয়ে থাকে। যা ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়। তাছাড়া এ তে রয়েছে বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড যা মানবদেহের জন্য উপকারী। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ করে

শজনে পাতার শাক বা কাঁচা পাত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *