[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- আবদুর রহমান কুমিল্লা প্রতিনিধি]
কুমিল্লার লাকসামের নুরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষকের স্থলে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিদেরকে এমপিওভুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. মো.মাহবুুবুল আলমের বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা গেছে- প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই অধ্যক্ষ রেজুলেশন, নিয়োগ-যোগদানপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে এই ঘটনা করেছেন। এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আমিনুল ইসলাম নামে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া এক ব্যক্তির কাছে কাছ ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবিরও অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেন ও অধ্যক্ষ ড. মাহবুুবুল আলম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৮ মে প্রতিষ্ঠানটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হন মো.আমিনুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি। ওই সময়ে কলেজটির ডিগ্রি শাখার এমপিও ছিলো। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নন-এমপিও শিক্ষক হিসেবে বিনা বেতনে পাঠদান চালিয়ে গেছেন আমিনুল। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৯ সালে স্থগিত হওয়া সেই এমপিও চালু হয়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর বিনা বেতনে পাঠদান দেওয়া সেই আমিনুলের স্থলে এমপিওভুক্তির জন্য কলেজ অধ্যক্ষ নাম প্রেরণ করেন মোশাররফ হোসেন নামে অন্য একজনের। ২০১৪ সালের ওই নিয়োগ পরীক্ষায় আমিনুলের সঙ্গে তৃতীয় হওয়া মোশাররফ এমপিওভুক্তির আগে কখনোই আসেননি কলেজে। একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে ডিগ্রি শাখার ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক নুরুজ্জামানের ক্ষেত্রেও। আমিনুলের মতোই প্রথম হওয়া নুরুজ্জামানের পরিবর্তে এমপিওভুক্তি হয় মো.শহিদুল ইসলাম নামে অন্য একজন। যদিও শহিদুল ২০১৪ সালের নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করেননি।
এসব ঘটনায় অভিযুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ এবং অনিয়ম করে এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষকদের বিচার চেয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ অন্তত ১৫টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন সেই মো.আমিনুল ইসলাম। অভিযোগকারী আমিনুল চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার দেবকরা গ্রামের আবদুল অদুদের ছেলে। অভিযোগের সঙ্গে প্রতিটি ঘটনার প্রমাণাদিও দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- আমিনুল ২০১৪ সালের ৮ মে নুরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে (নন-এমপিও) প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বিনা বেতনে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল বর্তমান অধ্যক্ষ ড. মাহবুুবুল আলম যোগদান করেন। স্নাতক পর্যায়ে কোন শিক্ষার্থী পাস না করায় ২০০৮ সালের মে মাসে ডিগ্রি পর্যায়ে কলেজটির এমপিও বন্ধ হয়ে যায় যার। এরপর বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হলে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালে ফের এমপিও চালু হয়। অধ্যক্ষ পদে যোগদানের পর থেকে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমিনুলকে কলেজের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করতে নির্দেশ দেন। এর কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আমিনুলকে বলেন- আপনার পরির্বতে মোশাররফ হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপনি যদি এমপিওভুক্ত হতে চান- তাহলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আপনি না দিলে মোশাররফ সেটা দিতে রাজি।
আমিনুল বলেন, সেদিন টাকা দিতে না পারায় অধ্যক্ষ আমাকে কলেজ থেকে জোর করে বের করে দিয়েছিলেন। এরপর নানা জায়গায় চেষ্টা করেও আমি আর চাকরি ফিরে পাইনি। তিনি ঘুষের বিনিময়ে আমার সঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষায় তৃতীয় হওয়া মোশাররফকে এমপিওভুক্ত করেছেন রজুলেশন, নিয়োগ ও যোগদানপত্র এবং অন্যান্য কাগজ পত্র জালিয়াতি করে। একই দুর্নীতি হয় ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক নুরুজ্জামানের ক্ষেত্রেও। নুরুজ্জামানের পরিবর্তে ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে মো.শহিদুল ইসলামকে এমপিও ভুক্ত করান অধ্যক্ষ। যদিও শহিদুল মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করেননি। আর ২০১৪ সালে মাধ্যামিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী যদি যোগদান না করেণ- তাহলে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ব্যক্তির এমপিও করা হবে না। কেননা এখানে টাকা লেনদেনের সম্ভবনা থাকে।
আমিনুল আরো বলেন, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের জাল-জালিয়াতির কারণে অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেনের ২০২০ সালের ১ মার্চ এবং শহিদুল ইসলামের ২০১৯ সালের ১ মে এমপিওভুক্তি হয়েছে। জালিয়াত অধ্যক্ষ এমনভাবে হাজিরা খাতা ও অন্যন্য কাগজপত্র তৈরি করেছেন যেন আমি আর নুরুজ্জামান ২০১৪ ওই কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত হইনি । নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না যে মোশাররফ হোসেনকে নিয়োগ দেখানো হয়েছে- তিনি ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের কলেজ এমপিওভুক্তি পর্যন্ত চান্দিনার রেদোয়ান আহমেদ ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের নন-এমপিও প্রভাষক হিসেবে চাকরি করেছেন। সেখানে তিনি নিয়মিত কলেজ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতনও গ্রহণ করেছেন। এরই মধ্যে অবৈভভাবে নিয়োগ হওয়ায় শহিদুল ইসলাম জেল-জরিমানার ভয়ে এমপিওভুক্তির মাত্র ৫ মাসের মাথায় শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে পদত্যাগ করে চলে যান।
প্রতারণায় অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেনের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি এবং চান্দিনার কলেজে কোন চাকরি করিনি। এছাড়া সেখান থেকে কোন বেতনও উত্তোলন করিনি। আপনি বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।
তবে মোশাররফ হোসেন চান্দিনার ওই কলেজ থেকে নন-এমপিও শিক্ষক হিসেবে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং নিয়োগ পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন নুরুল আামিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুুবুল আলম।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, কলেজের একটি পক্ষ ইন্দন দিয়ে আমিনুলকে দিয়ে এসব অভিযোগ করাচ্ছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কলেজ পরিচালিত হয় গভর্নিং বডির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকে। অধ্যক্ষ সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন মাত্র। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কলেজের অগ্রগতি ও উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।