[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:-নিজস্ব প্রতিবেদক]
বাবার কবরের পাশে নবজাতকসহ চিরনিদ্রায় শায়িত আঁখি।
ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো মাহবুবা রহমান আঁখিকে কুমিল্লার লাকসামে সমাহিত করা হয়েছে। রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর পর প্রসূতি মাহবুবা আক্তার আঁখির মৃত্যু হয়েছিল।
সোমবার (১৯ জুন) রাত সোয়া ৯টায় লাকসাম উপজেলার লাকসাম পূর্ব ইউনিয়ন গাইনেরডহরা গ্রামে অবস্থিত আঁখির বাবার বাড়িতে পৌঁছে তাদের মরদেহ। এ সময় তাদের মরদেহ দেখে পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
শেষবারের মতো আঁখি ও তার নবজাতকে দেখতে ছুটে আসেন আঁখির স্কুল জীবনের সহপাঠিসহ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ। পরে রাত ১০টার দিকে ওই গ্রামে জানাজা শেষে নবজাতকসহ আঁখিকে তার প্রয়াত বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। জানাজায় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
শেষবারের মতো আঁখি ও তার নবজাতকে দেখতে ছুটে আসেন আঁখির স্কুল জীবনের সহপাঠিসহ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ। পরে রাত ১০টার দিকে ওই গ্রামে জানাজা শেষে নবজাতকসহ আঁখিকে তার প্রয়াত বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। জানাজায় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
আঁখির স্বামী স্কুল শিক্ষক ইয়াকুব আলী সুমন ভুল চিকিৎসায় স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। আঁখি লাকসাম নরপাটি (লাকসাম পূর্ব) ইউনিয়নের গাইনেরডহরা গ্রামের পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এসআই মাহবুবুর রহমানের মেয়ে। তিনি ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে উচ্চতর গণিতে শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
তার বিয়ে হয় স্কুলশিক্ষক ইয়াকুব আলীর সঙ্গে। পাশের নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী জেলার তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
আঁখির বড় বোন নাসরিন আক্তার ও তনু আক্তার বলেন, কসাই ডাক্তাররা আঁখির জীবন ফিরিয়ে দাও। আমাদের বোন আঁখিকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।
আঁখির চাচতো ভাই শাখাওয়াত হোসেন শামীম বলেন, মরদেহ আঁখির বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের কাছে মানুষ কতো অসহায় ও জিম্মি নবজাতক এবং তার মায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হলো। এ ঘটনায় জড়িত সকলের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি। এলাকার লোকজনও একই দাবি করেছেন।
আঁখির স্বামীর অভিযোগ, গত ৯ জুন তার স্ত্রী আঁখির (২৫) প্রসব বেদনা শুরু হয়। রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি হয়ে ক্যাশ কাউন্টারে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মানি রিসিট লেবার ওয়ার্ডের নার্সের কাছে জমা দেন। সেখানে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর পর মুমূর্ষু আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইডে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা আঁখি রবিবার দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে মারা যান।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন প্রসব বেদনা শুরু হয় আঁখির। সেই রাতেই ডেলিভারির জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে প্রসূতি আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করালে ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ডেলিভারি করতে যান ডা. মিলি।
ডা. মিলি ওই প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করার পর বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে রবিবার (১৮ জুন) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে দুপুর ২টার পর নবজাতকের পর মা আঁখির মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় বুধবার (১৪ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। মামলার আসামিরা হলেন- সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা (২৮), ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা (৩৮), অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরো অজ্ঞাত ৫-৬ জন।
বুধবার এজাহার নামীয় দুই আসামি ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) আদালতে তুললে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।