[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]
কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে উদ্দেশ্য করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, ‘আপনি ব্যক্তিগতভাবে কুমিল্লার জন্য কি করেছেন, দেখান। একটা ব্রিজ করে দেখান। শুধু বলেন, দুনিয়ার সব করে ফেলছেন। ৬৪ জেলায় যেই উন্নয়ন হয়েছে, কুমিল্লায়ও তা হয়েছে। আপনি ব্যক্তিগতভাবে কি করেছেন। তিনবার এমপি ছিলেন, আবারও এমপি হইতে পারেন। এতোদিন কি করেছেন, পরে কি করবেন তা বলেন। শুধু শুধু আমার বিরুদ্ধে প্রপাগন্ডা ছড়াবেন না। মানুষের কাছে আমাকে ছোট করবেন না। আসলে আমি ছোট হই না, আপনিই ছোট হন।’
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে কুমিল্লা নগরীর ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিমিয়কালে মনিরুল হক সাক্কু এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লার বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে সদর আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার মনিরুল হক সাক্কু সিটি মেয়র থাকাকালে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ তুলেন। একসময় তাকে ‘চোর-ডাকাত’ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।
এর জবাবে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘বাহার ভাই বিভিন্ন স্থানে মিটিংয়ে মুখে যা আসে তাই বলেন। কিন্তু একজন এমপি এভাবে বলতে পারেন না। আমি যদি চুরি করে থাকি- তাহলে দেশ আপনাদের, মেয়র আপনাদের, আপনি নিজে এমপি, প্রশাসন আছে- বিচার দেন। দেশে আইন আছে, সিটি কর্পোরেশনে সব ফাইল আছে। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে তাকে বলেন কেইস দিতে। কিন্তু এসব না করে প্রপাগ-া ছড়াচ্ছেন কেন? আজ থেকে দেড় বছর আগেও তো আমরা এক সাথে ছিলাম। ১২ বছর আমি সাক্কু ভালো ছিলাম, এখন খারাপ হয়ে গেছি। এটা তো জেলাসি। ওনি তিনবার হজ করেছেন, আমি একবার করছি। উনার সাথে আমি নিজে হজ করছি।’
সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর সব ইতিহাস তুলে ধরবেন উল্লেখ করে মনিরুল হক সাক্কু বলেন- ‘ইলেকশনের তফসিল ঘোষণা করুক, আমি সব হিস্টরি বলবো। আমি কিভাবে চলছি, ওনি কিভাবে চলছে- সব বলবো। এক হাতে তালি বাজে না। আমি চোর- উনি কিছু না। আমি ডাকাত, সব আমি করছি? আমার নামে এভিডেন্স দিয়ে কোর্টে দিয়ে দেন। বাঘের বাচ্চা হয়ে থাকলে দিয়ে দেন। ব্যক্তিগত ভাবে মানুষকে ডেকে এনে মুখে যা আসে তা বলবেন এটা ঠিক না। মানুষের কাছে বলে আমাকে ছোট করেন কেন?’
সাবেক মেয়র সাক্কু বলেন- উনি বলেন দুনিয়ার সব উনি করছেন। অথচ পালপাড়া ব্রিজ আকবর ভাই (প্রয়াত মন্ত্রী আকবর হোসেন) প্রথম করছে, চানপুর ব্রিজ আকবর ভাই করছে। মৃত্যুর ৮দিন আগে আকবর ভাই টিক্কারচর ব্রিজের কাজ শুরু করেন। বিবির বাজার স্থলবন্দর, বাখরাবাদ আকবর থাকতে করে গেছেন। আকবর ভাই শুরু করেছিলেন বলেই এখন বড় হইছে। উনি এমন আরেকটা ব্রিজ করে দেখাক। আপনি ব্যক্তিগতভাবে কুমিল্লার জন্য কি করেছেন দেখান। একটা ব্রিজ করে দেখান, ৬৪ জেলায় যা হইছে কুমিল্লায়ও তা হইছে- আপনি নিজে কি করেছেন?
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে এনে আমি কুমিল্লার উন্নয়ন করেছি। কাজ কি কম করেছি। এখন যে কাজ চলছে সেগুলো সব আমার টেন্ডার। গত সিটি নির্বাচনের সময় তিনি বলেছেন স্বেতপত্র প্রকাশ করবেন । তো করেন না কেন? তদন্ত সংস্থার কাছে অভিযোগ দেন।
এদিকে শনিবার রাতে পাঁচথুবি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আয়োজনে কর্মীসভায় মনিরুল হক সাক্কু অভিযোগ করেন, ‘গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাকে পরিকল্পনা করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন ইলেকশনের ফলাফল দেরিতে প্রকাশ করা হয়েছে, চারটি কেন্দ্রের ফল দেরিতে হইছেÑ এগুলো আপনারা দেখেছেন। এছাড়াও আরও বহু পরিকল্পনা করেছে। তারা কি ৫০ হাজার ভোট পাইছে? আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি নৌকা ২০ হাজার ভোটও পায়নি। ২১টি কেন্দ্রের পাসওয়ার্ড (ইভিএমের) তারা বদলাই দিছে। ঘোড়া-ঘরি যেখানেই ভোট দেন, গেছে নৌকায়। অর্থাৎ আমরা ভোটটি নষ্ট। তারপরও তারা যখন না পারছে, এরপর কেন্দ্র থেকে অর্ডার এনে চারটির কেন্দ্রের ফল চার ঘন্টা দেরি করিয়েছে। নিয়ম হচ্ছে আধাঘন্টার মধ্যে ফল প্রকাশ করা। আপনারা সব দেখেছেন। টিভিতে পর্যন্ত দেখাইছে ৯২৭ ভোটে আমি পাশ। এরপরও তারা ফল বদলাই ফেলছে। জেলা শিল্পকলায় কি হয়েছে, আপনারা সব দেখেছেন।’
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত একসাথে চলছি। হজ করছি এক সাথে। এখন আমি চোর হয়ে গেলাম! ১২ বছর কি চোর ছিলাম না? প্রথমে বলে চোর, এখন বলে ডাকাত। ডাকাতের সাথে চোরের সাথে আপনি ১২ বছর চললেন কেনো? এতোদিন শুনেন নাই কিছু আমার নামে? আপনি তো কুমিল্লার এমপি, আপনার তো শুনার কথা ছিলো। আপনি সেসময় জিজ্ঞাস করেননি কেন? আপনি আমাকে কিছু না জিজ্ঞাস করে তো অন্যায় করেছেন। না জিজ্ঞেস করে বরং তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন এমনে করো, তেমনে করো। মেয়র ইলেকশনের সময় বলেছেন আমার স্বেতপত্র প্রকাশ করবেন। দেড় বছর তো হয়ে গেলো প্রকাশ করে না কেনো? কুমিল্লা শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে আমি নিজের পকেট থেকে টাকা করেছি। আমি আমার আবেগে এসব করেছি। উনি এখন যেসব কথা বলে এটা ঠিক না। আপনি ১৫ বছর কি করেছেন সেটা বলেন। তা না বলে আমি চোর, আমি ডাকাত- এসব বলছেন। এটা কোন ধরনের কথা। এটা তো রাজনৈতিক ভাষা না।
তিনি বলেন, যে বিল্ডিংটাতে আমি দাঁড়িয়ে আছি, সেটা আমার বাবার, এটা পৈত্রিক সম্পত্তি। এটাকে ডেভেলপার দিয়ে বিল্ডিং করেছি, এটাতে ৮৪টা ফ্ল্যাট আছে, আমরা ৪২ শতাংশ পাবো। গত ২৬ নভেম্বর সমাবেশ হয়েছে- আমি সব লোক এনে এটাতে রেখেছি, এটাকি আমার অপরাধ? আমি বলছি যে যেভাবে পারেন থাকেন। তিন দিন আমি তিনজন বাবুর্চি দিয়ে ৩ হাজার লোকের খাবার খাওয়াইছি। এটা দল করি বলে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। উনি (এমপি বাহার) এখন এসব কথা বলে বেড়ান, এটা ঠিক না।