[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- কুমিল্লা প্রতিনিধি]

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় প্রেমিকের কাছে প্রতারিত হয়ে গ্রাম্য সালিশে উপস্থিত মাতাব্বরদের অশালীন কথা শুনে সহ্য করতে না পেরে সালিশ চলাকালীন সময় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন আমেনা আক্তার নামে এক কলেজছাত্রী।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আমেনা আক্তার কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলিকামোড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তিনি চান্দিনা মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।


এ ঘটনায় নিহতের পিতা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রেমিক গাজী বিল্লাল, গ্রাম্য মাতবরসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আর ৫ জনকে আসামি করে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, চান্দিনা উপজেলার আলিকামোড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক রফিকুল ইসলামের ৪ সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে আমেনা আক্তারের সাথে একই গ্রামের হাসেম প্রধানের ছেলে গাজী বিল্লাল হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক এক পর্যায়ে ঘনীভূত হয় এবং বিয়ের প্রলোভন দেখায় প্রেমিক বিল্লাল। সম্প্রতি আমেনা আক্তারের পরিবার তার জন্য বিয়ে ঠিক করায় ওই বিয়েতে অসম্মতি জানিয়ে নিজের প্রেমের কথা পরিবারকে জানায়। আর তাতে বিয়ে ভেঙে যায়। পরবর্তীতে আমেনা আক্তার তার প্রেমিক বিল্লালকে বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তার সাথে প্রতারণা শুরু করে প্রেমিক বিল্লাল।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা রকম গুঞ্জন সৃষ্টি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে দুই পরিবারের মাঝামাঝি আনোয়ার খন্দকারের বাড়িতে একটি সালিশ দরবারের আয়োজন করা হয়। ওই সালিশে ছেলের পরিবারের লোকজন এবং বেশ কয়েকজন মাতবর ছেলের পক্ষ নিয়ে কুৎসা রটিয়ে মেয়েকে আপত্তিকর কথা শোনায়। এসব সহ্য করতে না পেরে সালিশ চলাকালীন ওই কলেজছাত্রী বাড়িতে গিয়ে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
নিহতের বড় ভাই ফারুক হোসেন জানান, আমরা গরীব, আর তারা (ছেলের পরিবার) বড় লোক। এই কারণে আমার বোনের প্রেম মেনে না নিয়ে উল্টো আমার বোনকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে অপমান করে তারা। আর মাতবররাও পক্ষপাতিত্ব করে যা-তা কথা বলে টাকার বিনিময়ে আমার বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করছিল। এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে আমার বোন। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত প্রেমিক গাজী বিল্লালের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে তারা আত্মগোপনে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ সেলিম প্রধান জানান, দু’জনের মধ্যে প্রেম ও বেশ কয়েকজন মাতাব্বরের কুৎসা রটানোর ঘটনা সত্য বলে আমি জেনেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
চান্দিনা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সাহাবুদ্দীন খাঁন জানান, অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা নিয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *