[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- কুমিল্লা প্রতিনিধি]
আয়বহির্ভূত ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুস সালাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এদিন রাতে দুদক, কুমিল্লার উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সরকারি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সালাম (৪১)।
তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আনন্দসার গ্রামের আব্দুল মুমিনের ছেলে। অপর অভিযুক্ত হলেন স্ত্রী খালেদা আক্তার বিউটি (৩৬)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আবদুস সালাম ২০০৬ সালের ৩০ মার্চ নকশাকার হিসেবে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভায় যোগদান করেন। এরপর ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি নকশাকার ও উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে সহকারী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পাশাপাশি তিনি একই অফিসে নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুস সালাম তার স্ত্রীর নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। তার স্ত্রী আসামি খালেদা আক্তার বিউটি ২০০৫ সালে এসএসসি পাস করেন এবং পরবর্তীতে আর পড়াশোনা করেননি।
তিনি একজন গৃহিনী। তিনি পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা ও মৌসুমী ফলের ব্যবসা করেন বলে দাবি করলেও মৌসুমী ফলের ব্যবসার প্রমাণাদি তথা মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো রেকর্ডপত্র/ভাউচার বা টাকা-পয়সা লেনদেনের হিসাবপত্র/খাতাপত্র, স্টক রেজিস্টার, ক্যাশবই ইত্যাদির রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি তারা।
অনুসন্ধানকালে খালেদা আক্তার বিউটির নামে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৪২৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ২৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার তথ্য পাওয়া যায়। আয়কর নথিতে তার প্রদর্শিত পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ৯ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ব্যয়সহ তার অর্জিত মোট অর্থ-সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এই অর্থ-সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার মোট বৈধ/জ্ঞাত আয় পাওয়া যায় ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫২০ টাকা। অর্থাৎ অনুসন্ধানকালে তার নামে অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার জ্ঞাত আয়ের উৎস ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৩ টাকা কম পাওয়া যায়। যা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ। আব্দুস সালাম তার অবৈধ আয়কে বৈধ হিসেবে দেখানোর জন্য স্ত্রীর নামে বিভিন্ন কাঁচামালের ব্যবসা দেখিয়েছেন। যার কোনো প্রমাণাদি দাখিল করতে পারেননি তিনি। আব্দুস সালাম তার অবৈধ আয় দ্বারা তার স্ত্রী খালেদা আক্তার বিউটির নামে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আবদুস সালাম ও তার স্ত্রী একে অপরের সহায়তায় অসৎ উদ্দেশ্যে ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে এবং ভোগদখলে রেখে তারা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে তদন্তকালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আরো সম্পদ পাওয়া গেলে তা মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বুধবার রাতে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুস সালামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।