[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি]


কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ছদ্মনাম সাগরিকাকে অবৈধ যৌনকামনা চরিতার্থ করার মানুষে জোরপূর্বক ধর্ষনের দায়ে আলাউদ্দিন নামের একজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা অর্থ দণ্ড প্রদান করেন কুমিল্লার আদালত। মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-০১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ আলাউদ্দিন বরিশাল সদর উপজেলার কুন্ডলী পাড়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে।


মামলার বিবরণে জানাযায়- ২০২০ সালের ১৮ জুলাই সকাল ১০টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত যেকোনো সময় ছদ্মনাম ভিকটিম সাগরিকা (১৩) বিশ টাকা নিয়ে আসামির ঘরের ভেতরে কসমেটিক দোকানে কাজল কিনতে এলে আসামি ঘরের দরজা জালানা বন্ধ করে ভিকটিম সাগরিকার পরিহিত পায়জামা খুলে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ভিকটিমকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ঘটনার কয়েক মাস পর ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ভিকটিম সাগরিকা ২৪ সপ্তাহ ১ দিনের অন্তঃসত্ত্বা মর্মে চিকিৎসক মতামত প্রকাশ করেন। ভিকটিম সাগরিকা বাতিসা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বর্ণিত ঘটনার বিষয় ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে ঘটনার মূল রহস্য খুলে বলেন। এ ব্যাপারে ভিকটিমের বাবা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আটগ্রামের কুদ্দুস (৬০) বাদী হয়ে বরিশাল সদর উপজেলার কুন্ডলী পাড়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে আলাউদ্দিন (৪৮) কে আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ( সং/০৩) এর ৯ (১) ধারার বিধানমতে একটি অভিযোগ দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাঃ কামাল উদ্দিন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। তৎপর ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি বিচারে আসিলে ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠনক্রমে রাষ্ট্র পক্ষে ৭জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি আলাউদ্দিন এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে দোষী সাব্যস্তক্রমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা অর্থ দন্ড অনাদায়ে আর ০২ (দুই) মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। রায়ে আরও উল্লেখ করেন যে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১৩ ধারা অনুসারে ধর্ষণের কারণে ভিকটিম সাগরিকা’র গর্ভে যে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে তাকে তার মাতা সাগরিকা কিংবা তার আত্মীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাবে। সন্তানটি তার পিতা বা মাতা কিংবা উভয় পরিচয়ে পরিচিত হতে অধিকারী। উক্ত সন্তানের বয়স ২১ (একুশ) বছর পূর্তি নস হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষক আলাউদ্দিনের নিকট হতে আদায় করতে পারবে। উল্লেখিত আইনের ১৫ ধারা অনুসারে আসামির বিরুদ্ধে আরোপিত অর্থদন্ডের অর্থকে ধর্ষণের শিকার ভিকটিম সাগরিকা’র ক্ষতিপূরণ হিসাবে গণ্য করা হলো এবং দণ্ডিত অর্থ ভিকটিমের বরাবর পরিশোধ না করলে একই আইনের ১৬ ধারা অনুসারে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ের নিমিত্তে আসামির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ভিকটিম সাগরিকাকে ক্ষতিপূরন হিসেবে পরিশোধ করার জন্য ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর, কুমিল্লাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলাউদ্দিন আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্র পক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী স্পেশাল পিপি এডভোকেট প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন- আশা করছি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রাখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *