[ম্যাক নিউজ ডেক্স]
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ক্ষিতারেরপাড়ার (রানীরপাড়া) বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম অন্যের ৭ সন্তানকে নিজের দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতে সহায়তা করেন। এতে রাতারাতি অর্ধ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।
স্থানীয়দের মতে- রফিকুল ইসলামের ঔরসজাত সন্তান দু’জন। কিন্তু কাগজে-কলমে দেখান সন্তান সংখ্যা ৯ জন। বাকি সাতজনের পিতৃত্ব গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা সনদের অপব্যবহার করে কোটায় চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতে সহযোগিতা করেছেন সোনাতলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, রফিকুল ও রেবেকা সুলতানা দম্পতির সন্তান রাশেদা আক্তার ও মোর্শেদা আক্তার। দু’জনই এখন গৃহিণী। তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সন্তানকে নিজের দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি ও অন্যান্য সুবিধা আদায় করে দিয়েছেন রফিকুল। এ জন্য অন্তত অর্ধকোটি টাকা হাতিয়েছেন রফিকুল।
রফিকুলের ভুয়া সন্তান হলেন- দুই ভাই আহসান হাবিব হান্নান ও জিয়াউর রহমান, বেলাল হোসেন, ফরহাদ হোসেন, সালেক উদ্দিন, রাকিব হাসান ও মৌসুমী আক্তার। তাদের মধ্যে হান্নান ও জিয়াউরের প্রকৃত বাবা সোনাতলার দক্ষিণ রানীরপাড়ার জাফর আলী। হান্নান চলতি বছর রফিকুলের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে চাকরি পান এবং বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সে কর্মরত (মামলার পর সাময়িক বরখাস্ত)।
এছাড়া সনদের মাধ্যমে জিয়াউরকে সারের ডিলারসহ নানা ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন রফিকুল। বেলালের আসল বাবা প্রয়াত জবেদ আলীর বাড়ি উপজেলার ক্ষিতারেরপাড়ায়। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিনি কনস্টেবলের চাকরি পান ২০০১ সালে। ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহবাগ ট্রাফিক জোনের এটিএসআই বেলালকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
ফরহাদ হোসেনের প্রকৃত বাবা সোনাতলার ক্ষিতারেরপাড়ার জাহিদুল ইসলাম। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে চাকরি করছেন ফায়ার সার্ভিসে। অভিযোগের পর গাইবান্ধার ফুলছড়ি ফায়ার সার্ভিস থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া রফিকুলের সনদ নিয়ে উপজেলার ক্ষিতারেরপাড়ার নায়েব আলীর ছেলে সালেক কনস্টেবল হন ২০০৫ সালে। সোনাতলার পাশের জুমারবাড়ী এলাকার মৌমিনুল ইসলামের ছেলে রাকিব চাকরি করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরে।
অন্যদিকে ভাই শহীদুল ইসলামের মেয়ে মৌসুমী আক্তারকে নিজের মেয়ে সাজিয়ে তিন বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি করেন রফিকুল।
এ ব্যাপারে এক সন্তান ফরহাদের বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, জন্মের পর আমার ছেলেকে দত্তক নেন রফিকুল। লেখাপড়া ও ভরণপোষণ দিয়ে তিনি বড় করে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি পেতে সহায়তা করেছেন। এতে দোষের কিছু নাই বলেও জানান তিনি।
তিন সন্তানকে চাকরি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল বলেন, পালক হলেও তারা আমার নিজের সন্তানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাদের জন্মসনদ, ভোটার আইডি কার্ড থেকে শুরু করে সব ধরনের সনদে বাবার নামের জায়গায় আমার নাম রয়েছে। এ কারণে তিন ছেলেকে আমার সনদ ব্যবহার করে চাকরি পাইয়ে দিয়েছি।
রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, অন্য কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তার বিরুদ্ধে এসব করছে। একটি মহল তার সম্মানহানি করার জন্য এসব করেছে। তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি তার স্ত্রী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। তবে মামলা আদালতে মোকাবিলা করবেন বলেও জানান তিনি।