[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- কুমিল্লা প্রতিনিধ]
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আবু জাফর খান ও উপাধ্যক্ষ মৃনাল কান্তি গোস্বামী। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ১৩ কোটির অনিয়মের অভিযোগ দুদকে জমা আছে। একই সাথে শিক্ষক পরিষদের চার নেতা পদত্যাগ করেন। এছাড়াও দুইজন শিক্ষক এ কলেজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। দুই শিক্ষক ও দুই কর্মচারীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় নিজ দপ্তরে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন তারা। এর আগে গত কয়েকদিন ধরে অধ্যক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকালে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।
একপর্যায়ে দোতালায় প্রশাসনিক ভবনে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে তাকে অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের নেমপ্লেট থেকে তাদের নাম উঠিয়ে দেন। পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন অধ্যক্ষ নিজেই।
অধ্যক্ষের সাথে একই সময়ে পদত্যাগ করেছেন
উপাধ্যক্ষ মৃনাল কান্তি গোস্বামী, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া, গণিত বিভাগের প্রভাষক বাধন দাস। পদত্যাগ করার পূর্বে চার সদস্যের শিক্ষক পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ।
পদত্যাগ শেষে কলেজের সরকারি গাড়িতে যাতায়াত না করার জন্য আলটিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে কর্মচারীদের অনুরোধ ও পদত্যাগকারী শিক্ষকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চারজনের জন্য একটি গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি দেয় ছাত্ররা ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য-কখনো এই ফি, কখনো সেই ফি বলে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন কলেজ প্রশাসন। চলতি বছরের ২৩ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ ৭ জনের দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন কলেজের শিক্ষক ক্লাব ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইউনিটের সদস্যরা।
পদত্যাগ স্বাক্ষরের পর গণমাধ্যমে দুই মিনিট বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন বিদায়ী অধ্যক্ষ।
শেষ বক্তব্যে তিনি বলেন, টাকা দিয়ে আমি অধ্যক্ষ হয়নি। আমাকে টাকা দিতে হয়নি। আমার জন্য দোয়া করো। আমি পদত্যাগ করলেও আমার চাকরি যাবে না । আমি চান্সপার হয়ে অন্য জায়গায় চলে যাবো।
এ সময় তিনি বলেন, গত ২ বছরে আমার বিরুদ্ধে কোন অডিট আপত্তি নেই। অডিটের কর্মকর্তারা কেনো কলেজের গাড়ি ব্যবহার করলেন? আর প্রতিটি সেমিনার থেকে কেনো ৬০ হাজার টাকা আনা হয়েছে?
এ দু’টি প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে চাননি।
অধ্যক্ষকে কলেজ থেকে নিরাপত্তার সাথে বের করার পর প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এ সময় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তপন ভট্টাচার্য্য ও সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন,
হিসাব রক্ষক মো. সাইফুদ্দিন সুমন ও হিসাব সহকারী
ইয়াছিন মিয়াকে বৃহস্পতিবার থেকে ক্যাম্পাসে
অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ আছে। নথি গায়েব করতে পারে, এ জন্য তারা কলেজে প্রবেশ করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত প্রফেসর ড. আবু জাফর খান ভিক্টোরিয়ার গণিত বিভাগের প্রধান ও উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০২১ সালের ০৯ আগস্ট অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান।