[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- রকিবুল ইসলাম ম্যাক]
কুমিল্লায় পাওনা ৩৬ হাজার টাকা না দেয়ায় পরকীয়া প্রেমিকের হাতে খুন হয় কুমিল্লা হোমনা উপজেলার বড় ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের ঘাগুটিয়া গ্রামের শাহপরানের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (৩৫), তাদের ৯ বছরের ছেলে সাহাত এবং প্রতিবেশী মামাতো ভাইয়ের মেয়ে তিশা (১৪)। গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লার হোমনার বড় ঘাগুটিয়া এলাকায় শাহপরানের ঘরে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। এই ঘটনার পর পরই এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্য। কিভাবে, কে, কখন, কেন এই হত্যাকাণ্ড এই নিয়ে শুরু হয় আলোচনার ঝড়।
হত্যাকাণ্ডের পরই রহস্য উদঘাটনে এবং খুনিকে গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ। হত্যাকান্ডের একদিন পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনিবার (৬ই সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে হোমনার শ্রীমদ্দি চরের গাও এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূলহোতা আক্তার হোসেনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী আক্তার হোসেন (২৭) হোমনা শ্রীমদ্দি চরের গাও এলাকার হক মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর হত্যাকারী আক্তার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নিহত মাহমুদার সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর মাহমুদা তার পরকীয়া প্রেমিক আক্তার হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা ধার নিতো। সর্বশেষ আক্তার হোসেন নিহত মাহমুদার কাছে ৩৬ হাজার টাকা পাওনা ছিল। আক্তার সেই টাকা মাহমুদার কাছে ফিরত চাইলে টাকা ফেরত দেব-দিচ্ছি করে আক্তারকে ঘুরাতে থাকেন মাহমুদা। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কয়েক দফা বাগবিতণ্ডা হয়। গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আক্তার পাওনা টাকার জন্য মাহমুদার বাড়িতে যায়। পরে সন্ধ্যার সময় একসঙ্গে সিঙ্গারা ও গেন্ডারি খাওয়াদাওয়া করেন মাহমুদা, হত্যাকারী আক্তার, মাহমুদার ছেলে সাহাত এবং মাহমুদার ভাতিজি তিশা।
খাওয়া শেষে খুনি আক্তার তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে মাহমুদ রাগারাগি করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ড হয়। তিশা ও সাহাত ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে সন্ধ্যার ঝগড়ার ক্ষোভে মাহমুদাকে মাথায় আঘাত করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন আক্তার। পরে আক্তার ভাবতে থাকে তিশা ও সাহাত তো আক্তারকে সন্ধ্যায় দেখেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা যদি আক্তারের কথা বলে দেয় সেই আশঙ্কা থেকে তাদের দুজনকেও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে মরদেহ তিনটি এক খাটের ওপর রেখে পালিয়ে যান হত্যাকারী আক্তার।
হোমনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, তিনজনকে হত্যার ঘটনায় নিহত মাহমুদার বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করার পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ হত্যাকারী আক্তারকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হলে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ঘাতক আক্তার।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লার হোমনার বড় ঘাগুটিয়া এলাকায় শাহপরানের ঘরে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এর আগে বুধবার রাতের কোনো একসময় তিনজনকে হত্যা করে মরদেহ একটি খাটের ওপর ফেলে রাখা হয়
নিহতরা হলেন- বড় ঘাগুটিয়া এলাকার মো. শাহপরানের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (৩৫), তাদের ৯ বছরের ছেলে সাহাত এবং প্রতিবেশী মামাতো ভাইয়ের মেয়ে তিশা (১৪)।