[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- রকিবুল ইসলাম ম্যাক]
বুড়িচং উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নের সমন্বয়ে আলাদা ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়নের দাবী জানানো হয়েছে।
এই দাবী আদায়ে চার ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধি সমন্বয়ে ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুনতাকিম ও সদস্য সচিব বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বিশেষ প্রতিনিধি ও ল’ ডেস্ক ইনচার্জ দিদারুল আলম দিদার।
যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মবিন খান, মাওলানা মফিজুল ইসলাম, অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, মো.জিল্লুর রহমান, সাংবাদিক সাখাওয়াত হাফিজ।
যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা আবদুল আউয়াল, মো. আলা উদ্দিন, অধ্যাপক মো: মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু মুছা, মো. বেলাল হোসাইন।
ময়নামতি বাজার জামে মসজিদের সামনে শনিবার ১৬ নভেম্বর নতুন উপজেলা বাস্তবায়নের দাবীতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন কমিটির সদস্য সচিব দিদারুল আলম দিদার।
লিখিত বক্তৃতায় দিদারুল আলম বলেন, আধুনিক সভ্যতায় তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত ও হয়রানির শিকার এক জনপদের লাখো মানুষের পক্ষে আমরা এক ‘সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা’ শুরু হলো। তিনি বলেন, উপজেলা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ একক। কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে একটি উপজেলা গঠিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৯৫ টি উপজেলা রয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুলাই মাসে পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে কক্সবাজার জেলায় ঈদগাঁও নামে নতুন উপজেলা গঠিত হয়। এটি দেশের ৪৯৫ তম উপজেলা। নতুন গঠিত এই ঈদগাঁও উপজেলার চেয়ে জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা ময়নামতিসহ চার ইউনিয়নে বেশি। আরো কম ইউনিয়ন ও জনসংখ্যাসহ অন্যান্য সুবিধাদি ময়নামতির তুলনায় কম হওয়া সত্ত্বেও এমন বেশ ক’টি উপজেলা পরিষদ দেশে বাস্তবায়ন হয়েছে।
সদস্য সচিব দিদার বলেন, ১৯৭০ সালে পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র থানা হিসেবে বুড়িচং থানার যাত্রা শুরু। এরপর বুড়িচং থানার ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৭৮ সালে ব্রাহ্মণপাড়া থানার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে বুড়িচং উপজেলার যাত্রা শুরু হয়। অথচ ময়নামতি বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। ময়নামতি প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন এর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ‘ময়নামতি অঞ্চল’ দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রাণকেন্দ্র ছিল। বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল ‘এই ময়নামতি অঞ্চল’। ময়নামতি অঞ্চল থেকে জেলা সদর কুমিল্লার দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ এই চার ইউনিয়নের সঙ্গে বুড়িচং উপজেলা সদরের দূরত্ব ‘ক্ষেত্রবিশেষে ৮ থেকে ৪০ কিলোমিটার’।
এডভোকেট দিদার বলেন, ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর ও ভারেল্লা দক্ষিণ বর্তমানে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন। বুড়িচং উপজেলায় এই চার ইউনিয়নসহ মোট ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। ‘বুড়িচং উপজেলা সদর’ অপর পাঁচটি ইউনিয়নের ‘মধ্যবর্তী স্থানে’ অবস্থিত। ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর, ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন গোমতি নদী দ্বারা উপজেলার সাথে পুরোপুরি বিভক্ত। এই চার ইউনিয়নবাসী গোমতি নদীর সম্পূর্ণ পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এই চার ইউনিয়নবাসীকে জেলা সদর হয়ে গোমতি নদী পেরিয়ে আরো ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবার প্রয়োজন উপজেলা সদরে যেতে হয়। তিনি বলেন, চার ইউনিয়নের মধ্যে জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় ‘ময়নামতি ও মোকাম ইউনিয়নকে’ আরো ‘একাধিক ইউনিয়নে বিভক্ত’ এবং ‘ময়নামতি ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রের কয়েকটি গ্রাম ও মহল্লার সমন্বয়ে পৌরসভা’ গঠনের বাস্তবতা বিদ্যমান রয়েছে।
দিদারুল আলম বলেন, ভৌগলিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ এলাকা থেকে তুলনামূলক ও অবকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে থাকা জনপদ ‘বুড়িচং উপজেলা সদরে’ ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নবাসীর মতো ভোগান্তির নজীর বাংলাদেশে খুব কমই রয়েছে। দীর্ঘ ৫৫ বছর ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ এই চার ইউনিয়নবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সময়ে চার ইউনিয়নবাসীর উপজেলা সদরে আসা যাওয়ায় বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে অনেককেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কোন এক অদৃশ্য কারণে অতীতে ময়নামতি অঞ্চল (ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ) বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এই অঞ্চল ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় কোনভাবেই ‘বুড়িচং উপজেলার অংশ হিসেবে’ হওয়া উচিৎ ছিলনা।
দিদার বলেন, চার ইউনিয়নের উপর দিয়ে দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক’, ‘চট্টগ্রাম-কুমিল্লা- সিলেট’ মহাসড়ক রয়েছে। গোমতি নদীর পশ্চিমাংশে ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর, ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নের অবস্থান। অপরদিকে গোমতি নদীর পূর্বাংশে বুড়িচং উপজেলার বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের অবস্থান। বাকি ‘পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যখানে বুড়িচং সদর ইউনিয়নে স্থাপিত ‘বুড়িচং উপজেলা পরিষদ’। এটিই প্রমাণ করে ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী ধরে বৈষম্য ও ভোগান্তির শিকার।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ এই চার ইউনিয়নবাসীর জন্য শুরু থেকেই দূরূহ ও কষ্টসাধ্য। ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক পটভূমি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি, শিল্প, পর্যটন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বসহ সার্বিক বিবেচনায় ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন সমন্বয়ে ‘নতুন উপজেলা’ প্রতিষ্ঠা এখন একটি জাজ্জ্বল্যমান বাস্তবতা।
ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, চার ইউনিয়নে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, পেশাজীবি নেতৃত্ব, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ‘ময়নামতি উপজেলা’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার এবং লড়াইয়ে একাত্ম।