[ রিপোর্টে :- রকিুল ইসলাম ম্যাক কুমিল্লা ]
১৪ বছর পর মানাসলু পর্বতশিখরে উড়ল বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা। আজ ২৫ সেপ্টেম্বর নেপালের স্থানীয় সময় রাত তিনটায় পৃথিবীর অষ্টম উঁচু পর্বতে ওঠেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী তৌফিক আহমেদ।
তৌফিক আহমেদ তমাল পেশায় একজন দক্ষ পর্বতারোহী ও ট্যুরিস্ট গাইড। তার বেড়ে উঠা কুমিল্লার চকবাজার গোধির পুকুরপাড় এলাকাতে। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করেন। তার বাবা শরিফ আহমেদ অলি কুমিল্লার একজন নাট্য ব্যাক্তিত্ব, কবি ও গবেষক ছিলেন। মানাসলু তার আরোহণ করা প্রথম আট-হাজারী শৃঙ্গ হলেও এর আগে তিনি বিশ্বের অন্যতম কঠিন ও ট্যাকনিক্যাল পর্বত হিসেবে পরিচিত আমা দাবলাম, আইল্যান্ড পিক এবং ভারতের বাঘিরথি-২ সহ বেশ কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ সফলভাবে আরোহণ করেছেন।

তাঁর নেপালি এজেন্সি সেভেন সামিট ট্রেকসের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেছে, তৌফিক আহমেদ ইতিমধ্যে অন্য পর্বতারোহীদের সঙ্গে বেজক্যাম্পের পথে নামতে শুরু করেছেন।
হিমালয় পর্বতমালার ৮ হাজার ১৬৩ মিটার উঁচু মানাসলু পর্বতের অবস্থান নেপালের মানসিরি হিমাল রেঞ্জে। ‘মাউন্টেন অব দ্য স্পিরিট’ নামেও পরিচিত এই পর্বত।
তৌফিক আহমেদের আগে ২০১১ সালে ১২ অক্টোবর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মানাসলু শৃঙ্গে ওঠেন এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী এম এম মুহিত।


নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে তৌফিক আহমেদ এই চ্যালেঞ্জিং অভিযান শুরু করেন ১ সেপ্টেম্বর। মানাসলু বেজক্যাম্পে পৌঁছে সেখানেই অবস্থান করেন বেশ কয়েক দিন।
এরপর ওপরের ক্যাম্পগুলোতে ওঠানামা করে শরীরকে অতি উচ্চতা ও নিম্ন তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন। চূড়ান্ত অভিযানের জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর বেজক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ২-এ পৌঁছান তৌফিক আহমেদ।
গতকাল সকালে পৌঁছান ক্যাম্প ৩-এ। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে এই ক্যাম্প থেকেই ধাপে ধাপে চূড়ার দিকে উঠতে থাকেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আজ ২৫ সেপ্টেম্বর নেপাল সময় রাত তিনটায় মানাসলু পর্বতশিখরে পা রাখেন।
তৌফিক আহমেদ পরিচিত তমাল নামে। তিনি ‘অলটিটিউড হান্টার বিডি মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাব’ নামে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ পরিচালনাকারী প্ল্যাটফর্মের সদস্য। তাঁর বেড়ে ওঠা কুমিল্লায়। পাহাড়ের প্রেমে পড়েন কলেজে পড়ার সময়।

একসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলই হয়ে ওঠে তাঁর আরেক ঠিকানা। ২০১৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন; কিন্তু তত দিনে হিমালয়ের প্রেমে মজে গেছেন বলে চাকরিতে থিতু হতে পারেননি।
পরের বছর চাকরি ছেড়ে ভ্রমণ আয়োজনকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। শুরুতে পর্যটকদের গাইড হিসেবে দেশের পাহাড়ে যেতেন। তারপর ভ্রমণ পরিচালনা শুরু করেন ভারত ও নেপালের বিভিন্ন পার্বত্য দর্শনীয় স্থানে।
বর্তমানে বছরের বড় একটা সময় তাঁর কাটে নেপালের পার্বত্য অঞ্চলে। দেশটির এভারেস্ট বেজক্যাম্প, অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্পসহ বিভিন্ন গন্তব্যে গাইড হিসেবে বাংলাদেশিদের নিয়ে যান তৌফিক।
এ কাজের পাশাপাশি নিজেকেও পর্বতারোহী হিসেবে গড়ে তোলেন তৌফিক। ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে নিয়েছেন পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি দেশটির একটি প্রতিষ্ঠান থেকে রক ক্লাইম্বিংয়ের ওপর মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি।
হিমালয়ের বিভিন্ন অভিযানে এরই মধ্যে সাফল্য অর্জন করেছেন তৌফিক। মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১৪ মিটার), ভাগীরথী-২ (৬ হাজার ৫১২ মিটার), আইল্যান্ড পিক (৬ হাজার ১৬০ মিটার), থারপু চুলি (৫ হাজার ৬৯৫ মিটার), মাউন্ট কানামোসহ (৫ হাজার ৯৭০ মিটার) ভারত ও নেপালের বিভিন্ন উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গে উঠেছেন।
তমালের এই সাফল্য শুধু তাঁর একার নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের। তাঁর একাগ্রতা, সাহস এবং দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আজ সার্থক হয়েছে। আমরা তাঁর এই ঐতিহাসিক অর্জনে অত্যন্ত গর্বিত এবং তাঁর নিরাপদে ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করছি।