[ম্যাক নিউজ]


কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভয়ংকর প্রতারক চক্র। তারা এতটাই সংঘবদ্ধ যে, মুহূর্তের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ভর্তি রোগীদের নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়ে যাওয়ার সময় তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রও নেয় না। এমনকি রোগীর স্বজনদেরও জানানো হয় না। এই চক্রের সদস্যদের মূল টার্গেট হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের অনেক সদস্য এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগিতায় চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি এমনই একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে কুমেক হাসপাতালে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক তরুণ হাসপাতালের রেজিস্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা এসে দেখেন ওই রোগী সিটে নেই। এরপর ওই রোগীর খোঁজ মেলে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে। তবে জীবিত নয়, মৃত অবস্থায়। ছাড়পত্র ছাড়াই মাহবুবুল আলম বাবুল (২০) নামের ওই রোগী কীভাবে অ্যাম্বুলেন্সে গেলেন সে বিষয়ে কিছুই জানে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার মৃত্যু নিয়েও শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা। হাসপাতালের রেজিস্টারের তথ্যমতে, ওই রোগী জীবিত ছিলেন। অথচ অ্যাম্বুলেন্সে পাওয়া গেছে তার লাশ। এখন ঠিক কোথায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কুমেক হাসপাতালে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী জেলার হাজারো রোগী প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে নিয়মিত ভর্তি থাকেন এক হাজারের বেশি রোগী। গত ১১ফেব্রুয়ারি ভোরে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবিদ্বারে বাস দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে ১২ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তাদেরই একজন ছিলেন নিহত মাহবুবুল আলম বাবুল। ওই তরুণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের উত্তর বাঙ্গরা গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে।

নিহতের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রোহান নামে একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক আমাদের কল করে জানায়, বাবুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। এজন্য দ্রুত বিকাশে ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। কিন্তু এতো টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য না থাকায় আমরা তা পাঠাতে পারিনি। এরপর আরও দুই দফা কল করে প্রথমে ১৫ হাজার এবং সবশেষে ১১ হাজার টাকা দাবি করে সে। এরই মধ্যে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি, আহত বাবুল সিটে নেই। পরে তাদের অ্যাম্বুলেন্সে বাবুলের লাশ দেখতে পাই। অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ইউছুফ। চালক রোহান কুমিল্লা নগরীর মুরাদপুর এলাকার রফিকের ছেলে। এক পর্যায়ে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিক আমাদের হুমকি দিতে থাকে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মালিক ও চালককে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়।

সাইফুল ইসলামের দাবি, ছাড়পত্র এবং রেফার করা ছাড়াই রোগী অ্যাম্বুলেন্সে গেল কীভাবে আমরা জানি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এই মৃত্যু হয়েছে। তারা জীবিত রোগীকে মেরে ফেলেছে। ওই চক্রের সঙ্গে হাসপাতালের লোকেরাও জড়িত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে কর্মরত অন্তত ৪ ব্যক্তি গোমতী টাইমসকে জানান, অনেক সময় এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, এমন রোগীকেও ওই চক্রের সদস্যরা অসাধু নার্স ও চিকিৎসকদের কমিশন দিয়ে রেফার লিখিয়ে ঢাকায় নিয়ে যায়। এ চক্রটি সম্প্রতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

গতকাল বিকেলে এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গোমতী টাইমসকে বলেন, ওই রোগীকে বৃহস্পতিবার ভোরে সিট থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন হাসপাতালে লোকজন কম থাকে। আমাদের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, ভর্তির সময় ওই রোগী জীবিত ছিলেন। এখন তারা কী জীবিত রোগী নিয়েছেন, না মৃত; সেটা এখনও বলতে পারছি না। এ ঘটনা তদন্তের জন্য হাসপাতালের ডা. সোহেল, ডা. আবু বকর ও ডা. কাইজারকে নিয়ে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত করে আমাকে প্রতিবেদন দেবেন। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের কেউ ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *