[ম্যাক রানা]
কুমিল্লার গোমতী নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় দীর্ঘ ১৬ বছর পর অবশেষে বালুমহাল ইজারা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাংলা সনের চৈত্র মাস পর্যন্ত বর্তমান বৈধ বালুমহালগুলোর ইজারার মেয়াদ রয়েছে। এরপর নতুন করে সরকারিভাবে বালুমহাল ইজারা না দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ বলেন, গোমতীতে এখন উত্তোলন করে বিক্রি করার মতো বালু নেই। যার কারণে মাটিখেকোরা এখন কৃষি জমির মাটি লোপাট করছে। চলমান ইজারার মেয়াদ শেষ হলে বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে গোমতী নদীতে হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করা হবে। সার্ভেতে নদীতে বালু না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই আগামীতে গোমতীর বালুমহাল ইজারা বাতিল করা হবে।
সম্প্রতি গোমতী নদী ও নদীর চরের কৃষি জমি রক্ষায় দিন-রাত অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। গতকাল (২০ মার্চ) থেকে গোমতী রক্ষায় মাসব্যাপী ২৪ ঘণ্টা অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ ও জনি রায় ২০ মার্চ সদরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি ট্রাক্টর জব্দ করেন। পৃথক অভিযানে জেলার দেবিদ্বার চরের কৃষি জমির মাটি কাটায় ব্যবহূত তিনটি ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এর আগে (গত ১৭ মার্চ) ও (গত ১৮ মার্চ) রাতভর অভিযানে ১০টি ড্রাম ট্রাক ও একটি ভেকু জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি জমির মাটি উত্তোলনে জড়িত সাতজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা ২০০৫ সালে গোমতী নদীর বালুমহাল সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া শুরু হয়েছিল। দেশজুড়ে গোমতীর বালুর বেশ চাহিদা থাকায় ইজারাদাররা শুরু থেকেই বেপরোয়া হয়ে পড়েন বালু উত্তোলনে। গোমতী নদীর কুমিল্লা সদর উপজেলার অংশে সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া ছয়টি বালুমহাল রয়েছে। এ ছাড়া জেলার বুড়িচং উপজেলার অংশে রয়েছে আরও একটি। প্রতি বছর বাংলা সনের বৈশাখ মাসে এসব বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কয়েক বছর থেকেই বৈধ ওই সাতটি বালুমহাল ছাড়াও কয়েকশ স্থান থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন প্রভাবশালী বালুখেকোরা। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়ে ঐতিহ্যবাহী গোমতী।
এদিকে, এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন বালু-মাটিখেকোরা। নদী গিলে খাওয়ার পর চরের কৃষি জমিও খেতে শুরু করেন তারা। কুমিল্লা অংশে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর বেশিরভাগ স্থানেই চরের কৃষি জমি এখন ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে ভেকু আর কোদালের আঘাতে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, গোমতী নদী আমাদের কুমিল্লা তথা দেশের সম্পদ। গোমতীর অস্তিত্ব রক্ষার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।
চলমান অভিযানকে আমরা সাবাই স্বাগত জানাই। তবে এই অভিযানকে সফল করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে থেকে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। আমরাও চাই বালুমহাল ইজারার নামে গোমতী ধ্বংস বন্ধ হোক। এই ইজারা গোমতীর জন্য ‘বিষফোড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান সম্প্রতি সরেজমিনে রাতের বেলায় গোমতীর মাটি উত্তোলনের দৃশ্য দেখার পর এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। স্যারের নির্দেশনায় আমরা আগামী এক মাস ২৪ ঘণ্টা গোমতী ও চরের কৃষি জমি রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করে যাব।