[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]
কুমিল্লায় ভারত সীমান্তের অদূরে অবস্থিত ছএখিল পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় চলছে রমরমা মাদকের বাণিজ্য।
কুমিল্লায় ভারত সীমান্তের অদূরে অবস্থিত ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় চলছে রমরমা মাদকের বাণিজ্য। ভারত থেকে ধেয়ে আসা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকে সয়লাব এখন সীমান্তের ছত্রখিল এলাকা।
জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নে অবস্থিত ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ি। সীমান্তের এই এলাকাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা টহলের মাধ্যমে এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে সামান্য মাদক আটক করতে পারলেও স্থানীয় ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। এই এলাকা থেকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার আলোচিত সোর্স মিঠু এবং রাজুর মাধ্যমেই মাদক বাণিজ্য থেকে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মফিজুর রহমান। এ নিয়ে এলাকার সচেতন মহলে রয়েছে চরম ক্ষোভ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার আওতাধীন ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ি। এটি ভারত সীমান্তের অদূরে আমড়াতলী ইউনিয়নে অবস্থিত। জেলার এ ছত্রখিল এলাকায় রয়েছে বড় বড় মাদকের সিন্ডিকেট।
ভারত থেকে চোরাই পথে আসা বিপুল পরিমাণ মাদক বিক্রি হয় এই এলাকার আনাচে-কানাচে। সীমান্তের বড়জ্বালা, গোলাবাড়ী, নিশ্চিন্তপুর, বিষ্ণপুর, জামবাড়ীসহ প্রায় ১০-১২টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকার ফেনসিডিল, ভারতের তৈরি ইয়াবা, গাঁজা, আফিমসহ নানা ধরনের মাদক আসছে দেদারছে।
সীমান্ত দিয়ে এসব মাদক দেশে এনেই বড় বড় সিন্ডিকেটগুলো ছত্রখিল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পাইকারি হাঁট বসায়। তারপর প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ভ্যান, পিকআপ, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বাইসাইকেলযোগে এসব মাদক কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে।
অভিযোগ আছে- সীমান্তের এসব পয়েন্টের আইনশৃঙ্খলাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ি । কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ- এই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মফিজুর রহমানের সঙ্গে রয়েছে সোর্স আমড়াতলী এলাকার মিঠু এবং মাদক মামলায় চাকরিচ্যুত পুলিশের কনস্টেবল রাজু।
এ দুজনসহ আরও বেশ কয়েকজন মিলেই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইনচার্জ মফিজুর রহমানকে সুবিধা আদায় করে দেন। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থও লগ্নি করেন সোর্স মিঠু।
ইতোপূর্বে একটি চুরির মামলায় এ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ তপন বকচি মিঠুকে গ্রেফতার করেছিল। আর মাদক পাচারের মামলায় চাকরিচ্যুত হয়েছে কনস্টেবল রাজু। তাদের দুজনকে প্রায়ই ইনচার্জের সঙ্গে পুলিশের গাড়িতে দেখা যায়।
এলাকাবাসী জানান, ছত্রখিল এলাকার বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করে দেদারছে মাদক পাচার করছেন এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইলাশপুরের ইজাজুল হাসান, ছাওয়ালপুর এলাকার নাছির এবং পারভেজ, জামবাড়ী এলাকার মৃত ময়নাল মিয়ার ছেলে ফারুক এবং কামরুল, গোলাবাড়ী এলাকার লিটনসহ অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে ইজাজুলকে এলাকার লোকজন ইয়াবার ডিলার হিসেবেই চেনেন।
এদিকে সম্প্রতি ঢাকায় লাশের গাড়িতে মাদকের চালানসহ গ্রেফতার হওয়া মাদক ব্যবসায়ী এমিল এবং জহির জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলেও জানান এলাকার লোকজন। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা এতটাই বেপরোয়া এবং প্রভাবশালী যে তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলাও রয়েছে। তারা প্রায়ই মাদকসহ আটক হয়ে জেলখানায় যাচ্ছে আবার বেড়িয়ে এসে আগের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকার সচেতন মহল জানায়, ছত্রখিল ফাঁড়ি পুলিশ যদি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করে তাহলে এই এলাকায় ভারত থেকে মাদক আসা বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে পুলিশের অপরাধ, জনহয়রানি এবং মাদক নির্মূলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ব্যাপক চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও ছত্রখিল ফাঁড়ি পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩ এপ্রিল জামবাড়ী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ফারুককে ২ হাজার ৬০০ ইয়াবা এবং ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে ফাঁড়ি পুলিশ। পরে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে রাতারাতি ছেড়ে দিয়ে একই এলাকার মাদক কারবারি পূর্ব চাঁনপুর এলাকার হৃদয় এবং জামবাড়ী এলাকার ছামিউলকে বাড়ি থেকে আটক করে ফারুকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মাদক দিয়ে মামলা করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য এবং সোর্সরা পরিস্থিতি সামাল ও ধামাচাপা দেয়। ফারুকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মাদক দিয়ে হৃদয় ও ছামিউলকে চালান দেয়ায় তাদের স্বজনরা ছত্রখিল ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করতে গেলেও প্রভাবশালী সোর্সদের হুমকি-ধমকিতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ভুক্তভোগী ছামিউলের স্ত্রী মাহিনুর বেগম বলেন, আমার স্বামীকে পুলিশ এসে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে আমিও যাই। পরে দেখি ফারুকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মাদক দিয়ে আমার স্বামীকে তারা জেলখানায় প্রেরণ করে। এসব মাদক ছিল ফারুকের। তার কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এসআই শেখ মফিজ আমার স্বামীকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সোর্স মিঠু এবং রাজুই এসআই মফিজের সব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন। এসআই মফিজ বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে ছোট ছোট ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীদের গ্রেফতার করে চালান করে দেন, তিনি একজন দুর্নীতিবাজ পুলিশ অফিসার।
একই অভিযোগ আরেক ভুক্তভোগী হৃদয়ের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীর।
আমড়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, আমার এলাকায় মাদক অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে, অতীতে কোনো সময় এত মাদকের আমদানি এবং বেচাবিক্রি দেখিনি, এখানে মাদকের পাইকারি হাট রয়েছে, সোর্স মিঠু এবং রাজুর মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশ সুবিধা নিচ্ছে- এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ছত্রখিল ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মফিজুর রহমানকে সতর্ক করেছি।
তিনি বলেন, শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতেও মাদকের সঙ্গে আপস করব না। ছত্রখিল ফাঁড়ির পুলিশ যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছত্রখিল ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মফিজুর রহমান বলেন, আমি মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার বলেই মাদক ব্যবসায়ীদের একটা গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি বখতিয়ার আহম্মেদ বলেন, ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়িটি আমার থানার আওতাধীন, আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় সদ্য যোগদান করেছি। ওই ফাঁড়ির ইনচার্জসহ কোনো পুলিশ সদস্য যদি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে কিংবা মাদক পাচারের সময় আটক না করে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করে, তাহলে তদন্তসাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হবে।(সূত্র ঃঃযুগান্তর অনলাইন)।