[ম্যাক নিউজ রিপোর্টঃ- রুবেল মজুমদার কুমিল্লা]
ঘনিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের পশু খামারিদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। কারণ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনও কমেনি, বরং আরও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় খামারিরা পশু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবেন কিনা এসব বিষয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আতঙ্কে রয়েছেন কুমিল্লায় পশু খামারিরা। কুমিল্লায় বছর দশেক আগে থেকে দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করেন খামারিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের এসব গরু বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন তারা। গত বছর কোরবানির ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১১হাজার গরু ও ছাগল বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেছেন খামারিরা।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ও বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন খবর শুনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।এতে কেউ কেউ আবার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গবাদিপশুর তথ্য আপলোড দিয়ে বেচাকেনা শুরু করছেন।এতে পিছিয়ে নেই জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসন । এর মাঝে বিগত বছরে মতো (ঈঁসরষষধ চড়ংঁৎযধঃ ধঢ়ঢ়ং ) নামে দাপ্তরিক ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খামারিদের গবাদিপুশর তথ্য আপলোড করেছেন। এ রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত এই ফেসবুক পেজটি ১৩০০টির তথ্য আপলোড হয়েছে। এর মাঝে বিক্রয় হয়েছে ৯৫টি গবাদিপশু।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৩০হাজার ১৮৮ জন খামারি আছেন। জেলায় এই বছর ২লাখ ৩৭হাজার গবাদিপশুর বিপরীতে ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩শত ৪৫ গবাদি পশু মজুদ রয়েছে। উদ্বৃত্ত আছে ১ হাজার ৩শত ৪৫ টি। গবাদিপশুর মধ্যে এক লাখ ৮১ হআজার ১৬৮ টি ষাঁড়, ৪০ হাজার ৭৪১টি ছাগল ও ৩৪৪৯টি ভেড়া রয়েছে। এছাড়া দেশি কৃষকদের রয়েছে ১৫ হাজার ৯৪ টি গবাদিপশু ।এছাড়া জেলার এবার হাট বসবে ২৭৭ টি স্থানে। জেলাজুড়ে ৬৩ টি মেডিকেল টিম ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা থাকবে ।
জেলা প্রাণিসম্পদ তথ্যমতে, প্রথম ঢেউয়ের পর করোনার প্রকোপ অনেকটা কমে যাওয়ায় চলতি বছর জেলার অনেক খামারি গতবারের তুলনায় আরো বেশি গরু মোটাতাজা করেছেন। অনেক নতুন খামার গড়ে উঠেছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি-দুটি করে গরু মোটাতাজা করছেন। শেষ সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসায় এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার খামারি ও কৃষকরা। বর্তমানে এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় ৮০ হাজার মানুষ খামারি, কৃষক ও ব্যাপারী।
জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালকোট গ্রামের খামারি জনি মিয়া দাবি করেন ,কোরবানি পশু বহনকারী যানবাহন যেন এর আওতায় না থাকে। না হলে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো।একই উপজেলা সামীন্তবর্তী এলাকার খামারি নয়ন সূত্র দত্ত বলেন, গেল বছর বর্ডার থেকে গরু কম আসায় কৃষক ও আমরা লাভবান হয়েচি। সেই আশায় এবারও কৃষি অফিসের পরামর্শে গরু মোটাতাজা করছেন।
সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর হাটের ইজারাদার শফি আহমেন জানান, কোরবানির ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে নড়াইলে আসেন ব্যবসায়ীরা। আসছে ঈদে করোনার কারণে অন্য কোনো জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসবেন কিনা জানি না। বাইরের জেলা থেকে বড় ব্যবসায়ীরা না এলে হাটে বেচাকেনা জমবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খামারি, কৃষক, ইজারাদার, ব্যবসায়ীসহ সবাই। লকডাউনের মধ্যে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ সব যানবাহন অবাধে চলতে দেয়া হোক।
লাকসাম উপজেলার স্থানীয় মৌসুম গরু ব্যবসায়ী মামুন সরকার জানান, করোনার কারণে যদি ঈদ মৌসুমে গরু ব্যবসায়ীদের লকডাউন দিয়ে আটকে দেয়া হয়, তাহলে জেলার অসংখ্য খামারি, কৃষক ও ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কুমিল্লায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম জানান, বছর দশেক আগে কুমিল্লার খামারিরা অল্পপরিসরে গরু মোটাতাজা করতেন। বিগত কয়েক বছর সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকরা গরুর ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্প্রতি বছর সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় কৃষকের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় খামারি ও কৃষকরা লাভবান হয়েছেন বেশ।এ বছর করোনার কারণে কোরবানির চাহিদা কিছুটা কম থাকবে।
তিনি আরো জানান , গত বছর করোনা সংকটের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কুমিল্লায় কোরবানির হাট’ নামে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটেরও উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং জেলার খামারি, কৃষক এবং ক্রেতা এ হাটের কারণে উপকৃত হয়েছিলেন। চলতি বছরও জেলার কৃষক ও খামারিদের কথা চিন্তা করে এমন পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, লকডাউন ও করোনার দুর্যোগময় মুহূর্তে কোরবানির পশু ঘরে থেকেই মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কীভাবে সহজে বেচাকেনা করা যাবে, এ বিষয়ে দ্রুতই একটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।এর মাঝেও আমরা গবাদিপুশের তথ্য জেলা প্রশাসনে ওয়েবসাটে আপলোড দিয়েছি। হাটবাজারে পশু হাটের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাল থেকে লকডাউনের ৭ দিন শেষের পর সরকারি নিদের্শনা অনুসারে পরবর্তী সিন্ধান্ত জানবো ।