[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]
ডায়াবেটিস রোগীদের কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক রয়েছে। কার্বোহাইড্রেট স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হলেও এগুলো রক্ত শর্করার মাত্রা বাড়ায়। উচ্চ রক্ত শর্করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকে আরো কঠিন করে তোলে। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে কার্বোহাইড্রেট কমাতে বা সীমিত করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
উচ্চ শর্করার মাত্রা ডায়াবেটিস রোগীর চোখ, পা, রক্তনালী, কিডনি ও হার্টকে ড্যামেজ করতে পারে। তাই বিভিন্ন অঙ্গের অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্বোহাইড্রেট অবশ্যই কমাতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কম কার্বোহাইড্রেটের ডায়েট রক্ত শর্করাকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। প্রমাণ পাওয়া গেছে- কার্বোহাইড্রেট যত কমাবেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তত সহজ হবে। আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (সিডিসি) ডায়াবেটিস রোগীদেরকে দৈনিক ক্যালরির ৪৫ শতাংশের বেশি কার্বোহাইড্রেট থেকে গ্রহণ না করতে পরামর্শ দিয়েছে।
উইসকনসিনের মেডিসনে অবস্থিত ইন্টিগ্রেটেড ডায়াবেটিস সার্ভিসেসের লাইফস্টাইল অ্যান্ড নিউট্রিশনের পরিচালক জেনিফার স্মিথ বলেন, ‘ডায়াবেটিস রোগে ভালো খাওয়ার মানে শুধু গ্রাম ও ক্যালরি হিসাব করা নয়। এখানে সঠিক পুষ্টিকর খাবার নির্বাচনই মুখ্য। যদি আপনি ৪৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট সাদা ভাত ও সাদা পাউরুটি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে গ্রহণ করেন, তাহলে এটা স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। সরল কার্বোহাইড্রেট রক্ত শর্করার ওপর দ্রুত প্রভাব ফেলে, অন্যদিকে জটিল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারে ফাইবার থাকে বলে রক্ত শর্করা ধীরে ধীরে প্রভাবিত হয়।’
কম কার্বোহাইড্রেট, উচ্চ চর্বির কিটোজেনিক ডায়েট ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকে আরো সহজ করতে পারে। কিটোজেনিক ডায়েট অনুসরণ করলে প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেট খেতে পারবেন না। শরীরে কার্বোহাইড্রেটের অভাব হলে শক্তির জন্য রক্তে শর্করা কম থাকবে। তখন শরীর নিজেকে চালিয়ে নিতে কিটোসিস স্টেটে প্রবেশ করে, যেখানে শরীর শর্করার বিকল্প শক্তির উৎস হিসেবে চর্বিকে ব্যবহারের জন্য কিটোন উৎপাদন করে।
যারা কিটোজেনিক ডায়েট অনুসরণ করেন তারা প্রধানত মাংস, মাছ, ডিম, পনির, বাদাম, সালাদ ও শাকসবজি খেয়ে থাকেন। এই ডায়েটের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো- কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে বেশি করে চর্বি খাওয়া, যেন শরীর শক্তি পেতে কিটোন ব্যবহার করে। এর ফলে উচ্চ রক্ত শর্করা প্রতিরোধ হয়। ডিউক ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত ডিউক ডায়েট অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টারের পরিচালক ও মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক উইলিয়াম ইয়ানসি বলেন, ‘গবেষণা ট্রায়ালে ডায়াবেটিস রোগীরা কিটো ডায়েট অনুসরণে আশাপ্রদায়ক ফল পেয়েছেন। দেখা গেছে, যারা উচ্চ পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার খেয়েছেন তাদের রক্ত শর্করা বাড়েনি।’
কিটোজেনিক ডায়েটের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যেমন- শরীর পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে অথবা রক্ত শর্করা বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে আসতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা কিটোজেনিক ডায়েট অনুসরণ করতে চাইলে অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে যে সকলের জন্য কিটো ডায়েট প্রযোজ্য নয়।