[ম্যাক নিউজ ডেস্ক]

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের অধীন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে প্রদর্শক পদসহ চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক।

রোববার (৯ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও রনজিৎ কুমার কর্মকারের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম মাউশি কার্যালয়ে অভিযান চালায়। অভিযানে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মাউশির এই বিশাল নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি অনুযায়ী প্রথমে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই অবস্থান থেকে সরে এসে কেবল ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেয় মাউশি।

এছাড়া এই নিয়োগে ‌‘প্রদর্শক’ ক্যাটাগরির দশম গ্রেডের পদগুলোকে তৃতীয় শ্রেণি দেখিয়ে মাউশি নিজেরা নিয়োগ দিচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ রূপে সরকারি চাকরি বিধিমালার পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়কে তৃতীয় শ্রেণি দেখিয়ে নিয়োগ দিলেও দ্রুত ১০ম গ্রেডে পদোন্নতি দিয়ে তাদের পিএসসির মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসের সঙ্গে আত্তীকরণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক অনুসন্ধানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করে।

রোববার দুদকের অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে সংস্থাটির উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার হাজার কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মাউশি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। দুদক টিম অভিযোগ যাচাই ও সত্যতা উদঘাটনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে। সংশ্লিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।

অভিযান সূত্রে জানা যায়, দুদক কর্মকর্তারা মাউশির কার্যালয়ে আলোচিত এ নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করেন।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নোট শিটে ১০ম গ্রেডের পদগুলোকে দ্বিতীয় শ্রেণি উল্লেখ করা হলেও মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে তা তৃতীয় শ্রেণি দেখিয়ে অনুমোদন নিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

এজন্য নিয়োগ বিধি ও কমিটির কার্যবিবরণীসহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আরও কাগজপত্র সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর দুদকের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। এসব কাগজপত্র সরবরাহ করা হলে সেগুলো যাচাই করে বিস্তারিত অনুসন্ধানের সুপারিশসহ কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম।

অভিযানের সময় নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহেদুল খবির দুদক কর্মকর্তাদের বলেন, আমাদের কাজ নিয়োগ দেওয়া আর পিএসসির দায়িত্ব প্রমোশন দেওয়া। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবরে ২৮টি পদে চার হাজার ৩২ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় মাউশি। এতে আবেদন করেন আট লাখ ৯৭ হাজার ৪৯ জন। এরই মধ্যে বেশির ভাগ পদের এমসিকিউ টাইপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন তারা মৌখিক পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন।

ওই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী এবং সদস্য সচিব ছিলেন উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. রুহুল মোমিন।

সম্প্রতি নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৭ ডিসেম্বর থেকে তাদের কাজ শুরু করে। তবে তদন্তকাজ শুরুর পরদিন ৮ ডিসেম্বর তদন্তকাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ২৮ নভেম্বর এক ব্যক্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী বলেন, সরকারি কলেজে বিভিন্ন বিষয়ের প্রদর্শকরা পরে পদোন্নতি পেয়ে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত প্রভাষক হন। এমনকি তাদের অধ্যাপক হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। অথচ এ ধরনের পদে মাত্র ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটা একটা খামখেয়ালি এবং মাউশির স্বেচ্ছাচারিতা। নিয়োগ কমিটির অনেকেই এ ব্যাপারে একমত না হলেও যেকোনভাবে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।

মাউশির একটি সূত্র জানায়, সরকারি কলেজে ১০টি বিষয়ের প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী, সহকারী গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগার, ল্যাবরেটরি সহকারীর পদগুলো ১০ম গ্রেডের। এ ধরনের ৬১০টি পদে নিয়ম না মেনেই নিয়োগ দিচ্ছে মাউশি।

সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, ১০ম থেকে দ্বাদশ গ্রেড পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদ। এগুলো পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু মাউশির নিয়োগবিধিতে এই পদগুলোকে তৃতীয় শ্রেণির দেখিয়ে শুধু এমসিকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *